দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
মাইশোরায় হনুমান খুনের ঘটনায় গড়িমসির অভিযোগ উঠেছিল আগেই। পশুপ্রেমীদের একাংশ অভিযোগ তুলেছিলেন, বন দপ্তর বিষয়টিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। সেই কারণেই তারা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করছে না। আর পুলিশও ভাঙা রেকর্ডের মতো শুনিয়ে গিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার দুপুরে হনুমান খুনের ঘটনায় পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিসের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অঙ্কন পাণ্ডার বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করল কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
বন দপ্তরের গাফিলতিতেই হনুমানটি মারা গিয়েছে বলে এফআইআর-এ উল্লেখ রয়েছে। হনুমানের গায়ে বাজি ছোড়ার অভিযোগে মন্টু নামে এক অভিযোগব্যক্তির বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের হয়েছে। যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত বন দপ্তরের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
দিনকয়েক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের মাইশোরায় প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিল একটি হনুমান। সেই সময়ে তার গায়ে শব্দবাজি ছোড়ে কয়েকজন। বাজির বিকট শব্দে ভয় পেয়ে একটি গাছের মগডালে উঠে পড়ে হনুমানটি।
সেখানেই সন্তান প্রসব করে। গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তিন সদ্যোজাতের। পরে গাছ থেকে নেমে আসার পরে হনুমানটিকে ধারালো অস্ত্রের কোপ মারা হয় বলেও অভিযোগ। জখম হনুমানটির শুশ্রূষা করেন স্থানীয় কয়েকজন।
গত বুধবার বন দপ্তর হনুমানটিকে উদ্ধার করার কয়েক ঘণ্টা পরে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা যায় হনুমানটি। তারপরেই বন দপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও বন দপ্তর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না-করায় ক্ষোভ জমছিল পশুপ্রেমীদের মধ্যে।
শনিবার পাঁশকুড়া থানায় পৌঁছন বিধাননগর হেল্প স্ট্রেস ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। মন্টু নামে জনৈক ব্যক্তির বিরুদ্ধে হনুমানের উপরে অত্যাচারের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে পাঁশকুড়া রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অঙ্কন পাণ্ডার বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সংস্থার সদস্যরা। হনুমানটিকে উদ্ধারের পরে তার প্রতি অবহেলা এবং তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে রেঞ্জ অফিসারের বিরুদ্ধে।
বিধাননগর হেল্প স্ট্রেস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদিকা জুঁই চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, মন্টু নামে এক ব্যক্তি হনুমানটির উপরে অত্যাচার চালিয়েছে। অথচ বন দপ্তর এখনও কাউকেই চিহ্নিত করতে পারল না। বন দপ্তরের গাফিলতির জন্য হনুমানটির মৃত্যু হয়েছে। পাঁশকুড়ার রেঞ্জ অফিসার কর্তব্যে গাফিলতি অস্বীকার করতে পারেন না।’
পাঁশকুড়া থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তও শুরু হয়েছে।’ আর পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিসের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অঙ্কন পাণ্ডাকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।