• পড়ে রইল চিপসের প্যাকেট, পাঁশকুড়ার সেই কিশোরকে ‘চোর’ অপবাদের নেপথ্যে ‘ঘর জামাই’
    এই সময় | ২৩ মে ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না

    চুরির অপবাদে আত্মঘাতী হয়েছিল পাঁশকুড়ার ১৩ বছরের কিশোর। চিপসের প্যাকেট ‘চুরি’ করার অভিযোগ করেছিলেন দোকান মালিক তথা সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিত। তবে এই অপবাদ গোটা গ্রামে রটিয়েছিলেন শ্যাম ভুঁইয়া নামে এক ব্যক্তি। এলাকায় সে ‘ঘর জামাই’ বলে পরিচিত। ওই কিশোরের উপর মানসিক চাপ তৈরি করতে এই শ্যামের বড় ভূমিকা রয়েছে বলেও মনে করছেন গ্রামবাসীরা। যদিও এখনও ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।

    শুভঙ্করের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতেই ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। ভাঙচুরের ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৃত কিশোরের মা-বাবা থানায় অভিযোগ জানানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন। শোকে দিশাহারা পরিবার। সকলের মুখে একটাই কথা, ‘ছেলেটা তো আর ফিরবে না।’ ওই কিশোরের বাড়িতে দোকান থেকে নিয়ে আসা তিনটে চিপসের প্যাকেট এ দিনও পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। দাঁতে কাটা তো দূর, প্যাকেটও খোলেনি সে।

    সকাল থেকেই থমথমে পরিস্থিতি গোটা গ্রামে। প্রাণবন্ত এক পড়ুয়ার মৃত্যু কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। অভিযুক্ত দোকান মালিকের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতেই হামলা চালানো হয়েছিল। রাত থেকেই শুরু হয় পুলিশের ধরপাকড়। তবে বাড়িতে নেই শুভঙ্করের। বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। শুভঙ্করের স্ত্রীর দাবি, শ্যাম ভুঁইয়াই কিশোরকে নিয়ে চুরির অপবাদ গোটা গ্রামে রটিয়েছিল। সেই কারণেই মানসিক চাপ থেকে চরম সিদ্ধান্ত নেয় ওই কিশোর।

    অন্যদিকে, শ্যামও এলাকাছাড়া বলে খবর। ঘটনার পর থেকেই তাঁকে এলাকায় দেখা যায়নি। শ্যাম পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় গ্রামে ‘ঘর জামাই’ হিসেবে থাকেন তিনি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় মাঝেমধ্যেই শ্যামকে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। অভিযোগ, ঘটনার দিন শ্যামই ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে অপমানজনক কথাবার্তা বলেন। কিশোর ও তার মাকে দোকানের সামনে নিয়ে আসেন।

    রবিবার স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ওই পড়ুয়া। ওই দোকানের সামনে কিছু চিপসের প্যাকেট ঝুলছিল। কয়েকটি প্যাকেট নীচে পড়ে যায়। ওই কিশোর সেখানে চিপস কিনতে গিয়েছিল। এর মাঝেই দোকানের পিছনে কোনও কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় দোকানদার। বেরিয়ে এসে ওই কিশোরকে পড়ে থাকা তিনটি চিপসের প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে। পিছু ধাওয়া করার পরে কিশোর টাকাও দিয়ে দেয়। এরপরেই চুরির অপবাদের বিষয়টি সামনে আসে। বাড়ি ফিরে গিয়ে আগাছানাশক খেয়ে নেয় ওই কিশোর। তমলুক মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। জীবনের শেষ কথা ডায়েরিতে লিখে যায় কিশোর — ‘মা আমি চুরি করিনি’।

  • Link to this news (এই সময়)