চাকরিহারাদের সেন্ট্রাল পার্কের সামনে বসার নির্দেশ হাইকোর্টের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৪ মে ২০২৫
বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে সেন্ট্রাল পার্কের সামনে নিজেদের কর্মসূচি স্থানান্তরিত করার জন্য এসএসসি’র চাকরিহারা শিক্ষকদের শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে তাঁদের জন্য জল, শৌচালয় সহ প্রয়োজনীয় সব বন্দোবস্ত রাজ্যকেই করতে হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, চাকরিহারাদের একাংশ বিকাশ ভবনের সামনে কর্মসূচি করায় সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। সেই কারণে তাঁদের কর্মসূচি সেন্ট্রাল পার্কের সামনে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার শুনানি চলাকালীন আদালতে চাকরিহারাদের দুই জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেছেন, ‘আপনাদের কর্মসূচির ফলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আপনাদের জায়গা কে দিয়েছেন? নিজেরাই ওখানে গিয়ে করছেন। সেন্ট্রাল পার্কে করুন। আপনাদের কর্মসূচি নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের চিন্তা। ১৫-১৬ দিন করছেন তো। করে যান। রাস্তার উল্টোদিকে সেন্ট্রাল পার্কের সামনে গিয়ে করুন।’ পাশাপাশি বিচারপতির নির্দেশ, একসঙ্গে ২০০ জন লোক নিয়ে কর্মসূচি করা যাবে। তার থেকে বেশি লোক যেন না থাকে। প্রয়োজনে অদলবদল করে জমায়েত করতে হবে। আন্দোলনকারীদের ১০ জন প্রতিনিধির নাম পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতে হবে। অপরদিকে পুলিশের উদ্দেশে আদালতের নির্দেশ, যে সকল চাকরিহারাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
৪০০–৫০০ জনকে নিয়ে কর্মসূচি করার অনুমতি চেয়েছিলেন চাকরিহারারা। এ বিষয়ে শুনানি চলাকালীন রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এত লোক নিয়ে কর্মসূচি করা হলে অসুবিধা হবে। এরপরই কল্যাণের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। চাকরিহারাদের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা ওখানে যা করছেন, আদালতে তা করবেন না।’ অপরদিকে রাজ্যকেও মানবিকভাবে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেন বিচারপতি। যাতে কোনও চাকরিহারার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া না হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, চাকরিহারাদের কর্মসূচিতে প্রতিদিন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আসছেন বলে আদালতে দাবি করেছেন কল্যাণ। কিন্তু তাঁর এই মন্তব্যে বিশেষ আমল দেননি বিচারপতি।
চাকরিহারাদের উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য, ‘যোগ্য শিক্ষকদের কি চিহ্নিত করা গিয়েছে? আইনশৃঙ্খলা যাতে অবনতি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনারা শিক্ষক। আপনারা তো আবার পড়াতে যাবেন। এমন কিছু করবেন না যাতে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। আমি জানি সবাইকে চেনা সম্ভব নয়। এত লোককে সবাই তো চিনবেন না। কে, কোথায় কী করবেন তার দায় আপনাদের উপর চলে যাবে। তাই পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দিন।’ এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৪ জুলাই।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি–র ২০১৬ সালের প্যানেল সম্পূর্ণ বাতিল হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। সসম্মানে স্কুলে ফেরা সহ একাধিক দাবিতে গত ১৫ মে থেকে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তায় বসে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশ।