সিঁড়ির নীচে রাত কাটানো আনারুলের উত্থান রকেটের চেয়েও দ্রুত গতিতে
বর্তমান | ২৪ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: বছরে ২৪ শতাংশ সুদের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের ৭০-৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা মহম্মদ আনারুল ইসলাম আপাতত ইডির জিম্মায়। কিন্তু কে এই আনারুল? কীভাবেই বা তার উত্থান?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লাভপুরের লাঙলহাটা গ্রামের কাজিপাড়ায় দরিদ্র পরিবারে জন্ম আনারুলের। বরাবরই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল আকাশছোঁয়া। সেই স্বপ্ন নিয়েই লাভপুর ছেড়ে বোলপুরে আসে। ২০১২ সালের শেষের দিকে নতুনপুকুরে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে খোলে অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস। সেই অফিসের সিঁড়ির নীচেই তার রাত কাটাত। অফিস করে বসে মানুষকে শেয়ার ব্যবসার লাভ বোঝাতে শুরু করে সে। তবে সারদা সহ একাধিক সংস্থার ভরাডুবি দেখে লোকে সাবধান হয়ে গিয়েছিল। তাই পরিবারের সদস্যদের দিয়ে শুরু করে সে। নিজের তিন বোন, তাদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন সহ আত্মীয়রা সকলেই বিনিয়োগ করেন। তা দেখে ধীরে ধীরে প্রতিবেশী ও পাড়ার লোকও উৎসাহিত হন। বিশেষত, আনারুল যেহেতু জেলার তৎকালীন এক প্রভাবশালী নেতার ভাইয়ের জামাই, তাই তার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে বারে বারে স্বচ্ছতার কথা বলত সে। শেয়ার ব্রোকারের ব্যবসায় লাভের পরিমাণ এতটাই বেশি যে, আগামী ১০ বছর বসে বসে টাকা দেওয়া যাবে— বিনিয়োগকারীদের এমনটাই বুঝিয়েছিল আনারুল। এছাড়া, বিনিয়োগ করে টাকা চেয়েও পায়নি, এমন কেউ প্রমাণ করতে পারলে তাকে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিল। এমনটাই বলছেন তার বিনিয়োগকারীরা। ২০১৯ সালে রবীন্দ্রবীথি বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় কোটি টাকায় এক বিঘার বেশি জমি কিনে প্রাসাদোপম বাড়ি করে সে। তখন থেকেই তার বিলাসবহুল জীবনযাপনের শুরু। চার-পাঁচটা গাড়ি, অসংখ্য বাইক, জমিজমাও প্রচুররয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
শুরুর দিকের আমানতকারীদের সে নিয়মিত পাসবই আপডেট করতে বলত। অন্যরা ফি বছর ২৪ শতাংশ সুদ পাচ্ছেন দেখে বাকিরাও বিনিয়োগ করেন। ধীরে ধীরে আনারুলের ব্যবসা পড়শি জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। শুধুমাত্র বোলপুর থেকেই ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা সে উপার্জন করেছিল বলে বিনিয়োগকারীদের দাবি। বাড়তি সুদের আশায় রক্ত জল করা টাকা তার হাতে তুলে দিয়ে বহু মানুষ এখন সর্বস্বান্ত। সেই তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, মানস ভট্টাচার্য, শান্তনু চট্টোপাধ্যায়, রাজিবুল ইসলামের মতোকয়েক হাজার মানুষ। আনারুল গ্রেপ্তার হয়েছে, জানতে পেরে তাঁরা একটু হলেও টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন। • ধৃত আনারুল।