সুবর্ণরেখা জল প্রকল্প, বাস্তবায়িত হতে চলেছে ঝালদায়
বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: আটবার টেন্ডার বাতিল হয়েছিল। অবশেষে সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে বহু প্রতীক্ষিত সুবর্ণরেখা জল প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে চলেছে ঝালদায়। এই প্রকল্পের ফলে ঝালদা শহরবাসীর জলকষ্ট লাঘব হবে বলে দাবি পুরকর্তৃপক্ষের। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১৯ কোটি ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টেন্ডার হয়েছে। মহারাষ্ট্রের একটি নির্মাণকারী সংস্থাকে প্রকল্পের কাজের ওয়ার্ক অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
ঝালদা শহরে জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমস্যা সমাধানে বাম আমলে ঝালদা শহরে মুরগুমা জল প্রকল্প চালু হয়। মুরগুমা জলাধার থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ঝালদা শহরজুড়ে জল সরবরাহ করে পুরসভা। কিন্তু, প্রায়ই জল সরবরাহ বিঘ্নিত হয় বলে অভিযোগ। তীব্র গরমে শহরের বহু এলাকা টানা দু’-চারদিন নির্জলা থাকার নজিরও রয়েছে। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, যত দিন গিয়েছে, শহরের পরিসর তত বেড়েছে। জনসংখ্যাও বেড়েছে। ফলে বাম আমলের মুরগুমা প্রকল্পের জল পর্যাপ্ত নয় শহরবাসীর। সেই কারণেই নতুন জল প্রকল্পের দাবি উঠছিল দীর্ঘদিন ধরেই। শহরবাসীর চাহিদার কথা ভেবে কয়েক বছর আগেই অম্রুত-২ প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য। তবে, ২০২২ সালের পুরসভা নির্বাচনের পর থেকে ঝালদা শহরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে। শহরের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে লড়াই শুরু হয়। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আসে। মামলা গড়ায় আদালতে। গত তিন বছরে তিনজন পুরপ্রধান হন ঝালদায়। তার জেরে পুরসভার উন্নয়নমূলক কাজকর্ম কার্যত লাটে ওঠে। এনিয়ে শাসকদলকে বিঁধতে ছাড়ছিল না বিরোধীরা। বাসিন্দারাও হতাশ হচ্ছিলেন ক্রমশই। ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন ব্যালটে। গত লোকসভা নির্বাচনেও ঝালদা শহরে প্রায় ছ’হাজার ভোটে পিছিয়ে যায় তৃণমূল।
আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনেও যাতে শাসক দলের এই হল না হয়, সেই কারণে এই জলপ্রকল্পের বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। এনিয়ে রাজ্যে বহুবার তদ্বির করেন ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান সুরেশ আগারওয়াল। অবশেষে সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে চলেছে। চেয়ারম্যান বলেন, যতক্ষণ না কাজ শুরু হচ্ছে, ততক্ষণ নিশ্চিত হতে পারছি না। ঝালদা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে তুলিন এলাকায় সুবর্ণারেখা থেকে জল উত্তোলন করা হবে। ঝালদা ও তুলিনের মাঝে খাটজুড়িতে জল পরিশোধন কেন্দ্র গড়া হবে। তারপর সেই জল পাইপলাইনের মাধ্যমে শহরের ওভারহেড ট্যাঙ্কে এসে পড়বে। দু’টি নতুন ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরি হবে শহরে।
কিন্তু, আটবার টেন্ডার বাতিল করতে হল কেন? পুরসভা সূত্রের খবর, এর আগে এই জলপ্রকল্পে ৬০কোটির বেশি টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। কিন্তু, পরবর্তীতে ডিপিআর পরিবর্তন হয়। প্রকল্প খরচ কমিয়ে ৪০ কোটি টাকা ধার্য হয়। কম খরচে এই প্রকল্প হাতে নিতে অনীহা দেখাচ্ছিলেন ঠিকাদাররা। সেই কারণেই প্রকল্পে এত দেরি হচ্ছিল বলে খবর।