• 'আরও টাকা লাগবে', হোয়াটসঅ্যাপে পরিচয়-ঘনিষ্ঠতা, 'ভালবাসা'র নামে লক্ষ লক্ষ টাকা লুঠে নিল ভুয়ো আইএএস 
    আজকাল | ৩১ মে ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে আইএএস অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা প্রতারণার ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মূল পাণ্ডাকে জিজ্ঞসাবাদ করে মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করে শিলিগুড়ি প্রধান নগর থানার পুলিশ। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় শিলিগুড়িতে। 

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা হল সুরজিত রায় ওরফে আলবোরনি সরকার, বর্ণা রায়, বিপ্লব রায় ও রাম নিবাস যাদব। শিলিগুড়ির বাসিন্দা ওই শিক্ষিকা পুলিশকে জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে হোয়াটসঅ্যাপে এক অজানা নম্বর থেকে তাঁর মোবাইলে মেসেজ আসে। নিজেকে আইএএস অফিসার এবং ‘‌র’‌র সহকারী সচিব বলে পরিচয় দেন অভিযুক্ত সুরজিত রায়। মোবাইল নম্বর কোথা থেকে পেল তা জিজ্ঞাসা করায় অভিযুক্ত জানিয়েছিল স্কুলের আরেক শিক্ষিকা বর্ণা রায় তাকে দিয়েছেন। এভাবেই হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিনিয়ত কথা হতে থাকায় সুরজিতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ওই শিক্ষিকার। তাঁকে বিয়েরও প্রস্তাব দেয় সুরজিত। সেখানেই থেমে থাকেনি অভিযুক্ত। নিজেকে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান বলে দাবি করে। জানায় তাঁর বাবা হায়দরাবাদে আইজি পদে কর্মরত এবং মা একজন স্কুল শিক্ষিকা। অভিযোগ, কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পর গল্প ফাঁদতে শুরু করে অভিযুক্ত। মায়ের হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য অর্থের প্রয়োজন বলে শিক্ষিকাকে জানায় সে। 

    এদিকে ভালবাসার মানুষের উপর বিশ্বাস করে শিক্ষিকা নিজের বেতন, সোনার গহনা বন্ধক রাখা থেকে শুরু করে এমনকি বাবার দোকান বিক্রি করে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সুরজিতকে পাঠান। এমনকি একবার শিলিগুড়ি জংশনে দেখা করার সময় সুরজিত তাঁর গলা থেকে জোর করে সোনার চেনও খুলে নেয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন শিক্ষিকা। 

    এরপর দিনে দিনে সুরজিতের এরকম আচরণ ও টাকা চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সন্দেহ হয় শিক্ষিকার। ১৮ মে তিনি শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটনের প্রধান নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে অভিযোগের ভিত্তিতে হলদিবাড়ি থেকে ভুয়ো আইএএস সুরজিত রায়কে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে জেরায় উঠে আসা বর্ণা রায়ের নাম। তাঁকে মাটিগাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দু’‌জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে প্রতারণার ৪৬ লক্ষ টাকার মধ্যে ১৯ লক্ষ টাকা বর্ণা রায়ের অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। বাকি টাকা গিয়েছিল চেঙ্গরাবন্ধার বাসিন্দা বিপ্লব রায় এবং মাটিগাড়া খাপরাইলের বাসিন্দা রাম নিবাস যাদবের অ্যাকাউন্টে।  পুলিশ ইতিমধ্যেই প্রতারণার টাকায় কেনা গাড়ি, মোবাইল ও শিক্ষিকার সোনার চেইন মিলিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে সুরজিতের আসল নাম আলবোরনি সরকার। সে বিবাহিত ও এক সন্তানের পিতা। তার বিরুদ্ধে হলদিবাড়িতে পকসো আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)