সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
যতদিন যাচ্ছে হাওড়া স্টেশনের উপরে চাপ বাড়ছে। যাত্রীচাপ সামাল দিতে প্রতি বছর নিয়ম করে হাওড়া স্টেশনে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলেও জায়গার অভাবে প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় হাওড়ার বিকল্প হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব শাখার সাঁতরাগাছি স্টেশনকে নতুন ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তার জন্য স্টেশনের খোলনলচে পুরোপুরি বদলে ফেলা হচ্ছে। করোনা ও লকডাউনের কারণে মাঝে কাজ কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।
সেই ধাক্কা সামলে উঠে আবারও জোরকদমে কাজ শুরু হয়েছে। রেলের কর্তারা জানাচ্ছেন, সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের সংস্কারের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। সব ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের আগেই নতুন চেহারায় দেখা যাবে সাঁতরাগাছি স্টেশনকে।
সাঁতরাগাছি স্টেশনের আধুনিকীকরণে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের লাগোয়া জমিতে গড়ে উঠেছে নতুন রেল কমপ্লেক্স। কলকাতা বিমানবন্দরের ধাঁচে গড়ে ওঠা এই বহুতল ভবনে এক ছাদের তলায় মিলবে সমস্ত সুযোগ সুবিধা।
ওই ভবনের নীচে রয়েছে ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। তার ঠিক সামনেই তৈরি হয়েছে নতুন টিকিট কাউন্টার। পাশেই রয়েছে কার পার্কিং জোন। ফলে ট্রেন থেকে নেমেই গাড়িতে উঠে যাবেন যাত্রীরা।
মূল প্রশাসনিক ভবনে ওঠার জন্য সিঁড়ি ছা়ডাও রয়েছে এসকালেটর। লাগেজ ট্রলি নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢালু রাস্তা বানানো হয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে খুব সহজেই ফুটওভারব্রিজে ওঠা যাবে। ফুটওভারব্রিজ ধরে যে কোনও প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো যাবে।
সাঁতরাগাছি বাসস্টপে নেমে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের নীচে দিয়ে সহজেই আসা যায় স্টেশনের সাবওয়েতে। এই সাবওয়ে দিয়েও যাত্রীরা সরাসরি ৬, ৭ ও ৮ নম্বর প্লাটফর্মে পৌঁছে যেতে পারে। যাঁরা ফুটওভারব্রিজের সিঁড়ি ভাঙতে চান না, তাঁরা সাবওয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
সাঁতরাগাছি স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টার থেকে প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ পর্যন্ত যে ফুটওভারব্রিজ ছিল, সেটিকে সম্প্রতি ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ তার বিকল্প হিসেবে এক নম্বর থেকে আট নম্বর প্লাটফর্ম পর্যন্ত পর পর দুটি ডবল লেনের চওড়া ফুটওভারব্রিজ বানানো হয়েছে।
যাত্রী নিরাপত্তার জন্য ফুটওভারব্রিজ এবং পুরো স্টেশন চত্বরকে সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে।যাত্রীদের একাংশের অবশ্য দাবি, পুরোনো যে ফুটওভারব্রিজটি ছিল, সেটা দিয়ে খুব সহজেই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো যেত।
এখন যে দুটি নতুন ফুটওভারব্রিজ তৈরি হয়েছে, খড়্গপুর প্রান্তের প্ল্যাটফর্মগুলিতে পৌঁছাতে অনেকটা হাঁটতে হচ্ছে। নতুন ফুটওভারব্রিজগুলো আয়তনে চওড়া হলেও তাতে ওঠা নামার জন্য কোনও এসকালেটর কিংবা লিফট নেই। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে হয়। সাবওয়েতে ওঠা নামার জন্যও কোনও এসকালেটর নেই। ফলে বয়স্ক যাত্রীদের খুব সমস্যা হচ্ছে।
রেলের এক আধিকারিক অবশ্য জানিয়েছেন, ফুটওভারব্রিজে ওঠার জন্য সিঁড়ির অপর প্রান্তে লিফট তৈরি হচ্ছে। ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ফুটওভারব্রিজে ওঠার দুটি এসকালেটর ও একটি র্যাম্প বানানো হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ জানান, উন্নয়নের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। সাবওয়েতে ওঠানামার জন্যে এসকেলেটর কিংবা অন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।