অর্ণব দাস, বারাসত: অশোকনগর কিডনি পাচার কাণ্ডে এবার গ্রেপ্তার বাঁশদ্রোণীর আইনজীবী। ধৃত বছর সাঁইত্রিশের প্রদীপ কুমার বর। আইনজীবীর বাড়িতে নোটিস দিয়ে তলব করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটে নাগাদ অশোকনগর থানায় হাজিরা দেয় আইনজীবী। রাত তিনটে পর্যন্ত অশোকনগর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ সূত্রে খবর, সদুত্তর দিতে পারেনি আইনজীবী। সে কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে কিডনি পাচার চক্রে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে অশোকনগর থানার পুলিশ। তাদের জেরা করে উঠে আসে এই আইনজীবীর নাম।
জানা গিয়েছে, কিডনি দানের ক্ষেত্রে জেলা এবং রাজ্যস্তরে দুটি কমিটি রয়েছে। নেফ্রোসেন্টার থেকে প্রাথমিকভাবে দাতা ও গ্রহীতার শারীরিক দিক খতিয়ে দেখার পর সেই নথির ভিত্তিতে আবেদন করলে স্বাস্থ্যজেলা প্রথমে পুলিশ ভেরিফিকেশন করায়। তারপর মহকুমা স্তরে হেয়ারিং হয়। সেই রিপোর্ট ‘রেকমেন্ড’ অথবা ‘নট রেকমেন্ড’ যাই হোক, পাঠানো হয় রাজ্যস্তরে। পাশাপাশি আদালত থেকে এফিডেভিট করাতে হয় দাতাকে। তবে, প্রশাসনের রেকমেন্ডেশন ছাড়া আদালত থেকে আইনি ছাড়পত্র মেলে না। এক্ষেত্রে আলিপুর কোর্টের ওই আইনজীবীর হাতযশেই নাকি ‘নট রেকমেন্ড’ কেসগুলি বাঁকা পথে এফিডেভিট হয়ে যেত বলেই ধৃতদের থেকে জানতে পেরেছে পুলিশ। সেই আইনজীবী জানত ঘুঘুর কোন বাসায় গিয়ে কীভাবে কাজ করাতে হয়।
পুলিশ জানায়, ওই আইনজীবী আলিপুর আদালতে প্র্যাকটিস করত। হাবরা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় কিডনি পাচার সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র এফিডেভিট হয়েছে ওই আইনজীবীর মাধ্যমে। আলিপুর আদালত থেকেই করিয়েছিল সে। হাবরায় কিডনি বদল অথচ আলিপুর আদালতের পাশ করা নথিপত্র দেখে সন্দেহ দানা বাঁধে পুলিশের। তারপরই তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারীরা জানান, এই চক্রের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ২০১৪ সাল থেকে ওই আইনজীবী কাজ করেছে। ৫০০ টাকার এফিডেভিটের জন্য অন্তত ১০ হাজার টাকা নিয়েছে সে। আদালতের কাগজে অবশ্য টাকা লেনদেনের কোনও উল্লেখ নেই। এর আগে কিডনি পাচার চক্রে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতরা হল অমিত জানা, মৌসুমী সর্দার, পিয়ালী দে, গৌরাঙ্গ সর্দার, বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতল। তাদের মধ্যে এক মহিলা এবং এক পুরুষকে জিজ্ঞাসা করে আইনজীবীর নাম উঠে আসে। শুক্রবার অভিযুক্ত আইনজীবীকে ৮ দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে বারাসাত আদালতে পাঠানো হয়।