• চাকরি খুইয়ে, এক পা হারিয়েও ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ প্রহ্লাদ
    এই সময় | ০৯ জুন ২০২৫
  • বিশ্বরূপ বিশ্বাস, ইসলামপুর 

    স্রেফ মনের জোরে জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প সিনেমায় হামেশাই দেখা যায়। তবে চোপড়ার প্রহ্লাদ সিংহের কাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে।

    ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করার। সেই মতো নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন প্রহ্লাদ। ততদিনে তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তারপরে একদিন স্বপ্নপূরণের চিঠি এল। ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার থেকে পেয়েছিলেন চাকরির নিয়োগপত্র।

    স্ত্রী রমা রায় সিংহকে ফোন করে বলতে পেরেছিলেন, ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি রমা শুনছ...!’ কিন্তু এক লহমায় সব ভেঙে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় প্রহ্লাদের। পথ দুর্ঘটনায় একটা পা হারান। প্রহ্লাদের কাহিনীটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু তাঁর জীবনের গল্পটা তিনি নিজেই লিখবেন বলে ঠিক করেন।

    একটু সুস্থ হয়ে একটা ফেসবুক পেজ চালু করেন। মাত্র ন’মাস পেরোতেই কেল্লাফতে! সেই পেজের ফলোয়ারের সংখ্যা এক লক্ষের বেশি। এক সময়ে যে প্রহ্লাদের স্মার্টফোন ছিল না, বন্ধু মারফত চাকরির খবর পেয়েছিলেন, সেই তিনিই এখন সমাজ মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’।

    কারও কাছে আবার তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারও। শুধুমাত্র ফেসবুকের আয় থেকেই দুই সন্তান-সহ চারজনের সংসার এখন ভালোই চলছে বলে লাজুক কণ্ঠে জানালেন প্রহ্লাদ। তাঁর কথায়, ‘এখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সত্যিই খুব সুখে আছি।’

    প্রহ্লাদ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন স্মার্ট ফোন কিনতে গিয়েই। বন্ধুর কাছ থেকে চাকরির চিঠি আসার খবর পাওয়ামাত্র তিনি স্মার্টফোন কিনতে ছুটেছিলেন চোপড়ার সোনাপুরে। আর তখনই রাজ্য সড়কে গাড়ির ধাক্কায় চিরতরে হারান একটি পা। চাকরি তো হয়ইনি, সঙ্গে পা হারানোয় সংসারে দেখা দেয় অভাব।

    দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়লেও হার মানেননি প্রহ্লাদ। আর এই ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতাই তাঁকে নয়া জীবন-দান করে। প্রথমদিকে নিজের ফেসবুক পেজে জীবনে ভেঙে না পড়ার বার্তা দিতে শুরু করেন তিনি। ভিউ বাড়তে থাকে। এরপরে কৃত্রিম পায়ের মাধ্যমে চলাফেরাও শুরু হয় তাঁর।

    আর্টিফিশিয়াল তো কী হয়েছে! তাই মোটিভেশনের পাশাপাশি তাঁর ভিডিও’র কনটেন্ট হয়ে ওঠে নাচ। স্বামীকে যোগ্য সঙ্গত দেন রমা। বর্তমানে দম্পতি নাচের ভিডিও আপলোড করে জনপ্রিয়তা কুড়োচ্ছেন।

    পাশাপাশি ফেসবুক থেকে আয় করে সংসারও সামলাচ্ছেন তাঁরা। হাপতিয়াগছে নিজেদের একটা মাথা গোঁজার ঠাইও হয়েছে। কয়েকদিন আগেই একটি রিসর্টের সামনে রাস্তায় দম্পতির নাচের ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। প্রহ্লাদের কথায়, ‘এভাবেই নাচ, গান, আনন্দ করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।’

    চোপড়ার সমাজকর্মী তথা কলকাতা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মী বাপন দাস প্রহ্লাদকে নিয়ে গর্বিত। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রহ্লাদের মাঝেমধ্যেই কথা হয়। ওর সঙ্গে কথা বলে মনে জোর পাই।’ প্রহ্লাদও বিপদে কখনও ভেঙে না পড়ার বার্তা দিয়েছেন।

  • Link to this news (এই সময়)