নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়ে শ্রীঘরে ঢুকলেন এক মহিলা। সাইবার প্রতারকদের লক্ষ লক্ষ টাকা নিজের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। দেশের মোট ১৮টি জায়গা থেকে ওই মহিলার নামে আগেই অভিযোগ হয়েছে। অবশেষে খাগড়ার এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে বহরমপুর থানার পুলিস ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম ঝুমা দে। সে বহরমপুরে একটি ছোট্ট খাবারের হোটেল চালায়। এই হোটেল ব্যবসা দেখিয়ে ওই ব্যাঙ্কে একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলেছিল ঝুমা। তবে ছোট্ট হোটেলে চালিয়ে যা আয় হওয়ার কথা তার কয়েক হাজার গুণ বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে তার অ্যাকাউন্টে।
জানা গিয়েছে, গত বছর ২০নভেম্বর খাগড়ার ইউকো ব্যাঙ্কে গিয়ে ঝুমা একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলে। কিছুদিন পর থেকে সেই অ্যাকাউন্টে দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে টাকা ঢুকতে শুরু করে। সাইবার প্রতারকরা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে সরাসরি ওই মহিলার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিত। নির্দিষ্ট সময়ে সেই টাকা প্রতারকরা তুলেও নিত। তার বিনিময়ে কমিশন পেত ঝুমা। এভাবে নিজের অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়ে সাইবার প্রতারকদের কাছ থেকে মোটা টাকা উপার্জন করত সে।
ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চার মাসে ৫৪ লক্ষ টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ঝুমার অ্যাকাউন্টে। সামান্য ঝুপড়ির মতো হোটেল চালিয়ে এত টাকা লেনদেন? ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের সন্দেহ হয়। তাঁরা ওই অ্যাকাউন্টটি নজরে রাখেন। বুধবার ঝুমা ব্যাঙ্কে আসে। বেশকিছু টাকা সাইবার প্রতারকদের পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু কমিশনের প্রাপ্য টাকা না মেটানোয় শুধুমাত্র কারেন্ট অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট নিতে যায় ঝুমা। ব্যাঙ্ক কর্মীরা ম্যানেজারকে জানালে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে বহরমপুর থানায় খবর দেন। পুলিস ওই মহিলাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতকে বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ জেলা আদালতে পেশ করা হলে চার দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। সাইবার প্রতারণার লক্ষ লক্ষ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে লেনদেন করেছে এই মহিলা। কীভাবে গোটা প্রক্রিয়া চলত, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। ওই মহিলার নামে দেশের ১৮টি থানায় অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাঙ্কের ম্যানেজার শ্রীকান্ত রায় বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে ওই মহিলা ব্যাঙ্কে এসে ঝুমা হিন্দু হোটেলের নামে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলে। গত চার মাস ধরে তার অ্যাকাউন্টে খুব অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। এদিন যখন আমাদের ব্রাঞ্চে ওই মহিলা আসে তখন থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিস এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। ওই মহিলার অ্যাকাউন্টে টাকা আসার পর দেশের ১৮টি জায়গা থেকে তার নামে মামলা রুজু হয়েছে। আমরা চাই, পুলিস উপযুক্ত তদন্ত করুক।