মায়ের ফাঁসি চেয়েছিল ছেলে, আদালত নির্দেশ দিল যাবজ্জীবনের
আজকাল | ২৭ জুন ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: মা খারাপ কাজ করেছে। ফাঁসি চেয়েছিলাম। যাবজ্জীবন দিল আদালত! বলল ছেলে। প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে পথের কাঁটা স্বামীকে সরানোর পরিকল্পনা করে দুষ্কৃতীদের সুপারি দিয়েছিলেন স্ত্রী!।ছেলের সাক্ষীতে ১২ বছর পর দোষী সাব্যস্ত হয় মা সহ আরও ছয় জন চক্রী। বৃহস্পতিবার ছয় অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন সাজা শুনিয়েছেন চুঁচুড়া আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক।
ঘটনা ঘটেছিল ২০১২ সালের ২৮ মার্চ, পোলবা থানার পাটনা গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ মালকে গলা কেটে খুন করা হয়। পুলিশ যখন খবর পেয়ে তদন্তে যায় কৃষ্ণা মালের স্ত্রী রীনা মাল পুলিশকে জানান,বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। তাকে আর ছেলেকে হাত বেঁধে তার স্বামীকে খুন করে গহনা টাকা লুট করে ডাকাত দল। পোলবা থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। কৃষ্ণ মালের সঙ্গে তার স্ত্রী রীনা মালের বয়সের ফারাক ছিল প্রায় কুড়ি বছরের। তাদের ১২ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
স্বামীর সঙ্গে সুখী ছিলেন না রীনা। বলাগড়ের জিকো পাল নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল রীনার। জিকো বলাগড় থেকে পোলবায় যাওয়া আসা করত বাইক নিয়ে। রীনার সঙ্গে দেখা করত। সেই প্রেমিকের সঙ্গে যুক্তি করে পাঁচজন দুষ্কৃতীকে সুপারি দেওয়া হয় কৃষ্ণকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার দিন দুষ্কৃতীরা গভীর রাতে কৃষ্ণ মালের বাড়িতে ঢোকে। দরজা খুলে দেন রীনা। ডাকাতি করতে এসে গৃহকর্তাকে খুন করে দিয়ে গেছে ডাকাত দল এমনই পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু পুলিশি তদন্তে উঠে আসে এক অন্য কাহিনী।
রীনার জিকোর সঙ্গে প্রেম, তার স্বামীকে খুন সাজানো ডাকাতি সব পরিকল্পনা জানতে পারে তদন্তকারীরা। এরপর ৪ এপ্রিল একে একে অভিযুক্ত,রীনা মাল জিকো পাল,দীপঙ্কর পাল,বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, লক্ষীকান্ত চক্রবর্তী, অভিজিৎ চক্রবর্তী,রাজা দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে চুঁচুড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায় চৌধুরী বলেন, এই মামলায় ১৮ জন সাক্ষী দিয়েছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মৃতের ছেলের বয়ান। আইনজীবী আরও বলেন, তিনি আদালতের কাছে বলেছিলেন এটা বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা তাই সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হোক।আদালত সেটা মনে করেনি।
চুঁচুড়া আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক কৌস্তভ মুখোপাধ্যায় সাতজনকেই যাবজ্জীবন সাজা শুনিয়েছেন। প্রত্যেকের পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।অনাদায়ে আরও দুই বছর জেল। মৃত কৃষ্ণ মালের ছেলে কুশল বলেন, মা যে অপরাধ করেছে তার জন্য ফাঁসি হওয়া দরকার ছিল।