প্রেম-বিচ্ছেদ-বদলা! ঘুমন্ত যুগলকে ফালাফালা করে দিল যুবক, হাড়হিম করা কাণ্ড বৈদ্যবাটিতে...
আজকাল | ০৫ জুলাই ২০২৫
মিল্টন সেন,হুগলি: প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল নিজেদের মধ্যে মারামারি করে যুগলের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমানও ছিল সেটাই। কিন্তু ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরই খটকা লাগে পুলিশ কমিশনার এবং অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের। শুরু হয় তদন্ত। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের জলে ধরা পড়ল দু'জন।
তদন্তে উঠে আসে খুন করা হয়েছে যুগলকে! বৈদ্যবাটি যুগলের রহস্য মৃত্যুর কিনারা করলো পুলিশ। ঘটনার হাওড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দু' জনকে। শুক্রবার ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয়।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে হুগলির বৈদ্যবাটিতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় যুগলের! মৃতদের নাম মনীশ ভাদুড়ী(৩৫) ও অপর্ণা মাঝি(৩২)। রাত তিনটে নাগাদ তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সীতারাম বাগান এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন যুগল। বৈদ্যবাটি রাজার বাগানে মনীশের বাড়ি আছে। গত ছয় বছর ধরে সীতারামবাগানে ভাড়া ছিলেন দুজনে। অপর্না প্রথম স্বামীকে ছেড়ে মনীশের সঙ্গে থাকতেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অপর্নার ছোটো বোন রিম্পার সঙ্গে একটি পানশালায় আলাপ হয় হাওড়া চামরাইলের বাসিন্দা গাড়ি চালক অর্জুন পাশোয়ানের। কয়েক দিনের মধ্যেই আলাপ গভীর হয়। রিম্পা স্বামীকে ছেড়ে অর্জুনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়। রিম্পার বড়দি তাদের দু'জনকে তেলেঙ্গানায় কাজের ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পর আবার তারা ফিরে আসে। রিম্পার পরে আরও একজনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় বলে জানা গিয়েছে।
তবে সম্প্রতি অপর্নার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয় অর্জুন। অর্জুনকে সঙ্গ দেয় তার জামাইবাবু নাসিরুদ্দিন সেখ। ঘটনার তিনদিন আগে আবার বৈদ্যবাটিতে যায় অর্জুন। সেখানে বচসা হয় অপর্ণার সঙ্গে। প্রকাশ্যে অপর্না তাঁকে চড় থাপ্পড় মারেন। এই অপমান এবংতাঁর সঙ্গে প্রতরণার বদলা নিতেই সম্ভবত খুনের পরিকল্পনা করে অর্জুন।
ঘটনার দিন অর্থাৎ বুধবার শিয়ালদা থেকে ছুরি কিনে বৈদ্যবাটিতে আসে। রাত পর্যন্ত ওই এলাকায় ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করে। ভোররাতে সে অপর্ণার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় অপর্ণা ও মনীশের ওপরে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এলোপাথাড়ি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরির আঘাত করে, ফালাফালা করে দেয় গোটা শরীর। রাত তিনটে নাগাদ প্রতিবেশীরা বাবাগো মাগো বাঁচাও চিৎকার শুনতে পায়। ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেন অর্জুন। পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি, ডিসিপি শ্রীরামপুর অর্ণব বিশ্বাস গতকালই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্ত শুরু করে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ।
মৃত অপর্ণার পরিবার, মা বোনকে জিজ্ঞাসা করে পুলিশ অর্জুনের কথা জানতে পারে। অর্জুন আর নাসিরুদ্দিন যে তাঁদের হুমকি দিত একথাও জানান। এরপরই পুলিশ ওই দুজনকে ধরার ফাঁদ পাতে। দুটো টিম তৈরি করে একটি জগদীশপুর তদন্ত কেন্দ্রের অন্তর্গত চামরাইলে পাঠায় অপরটি যায় মহেশতলায়। স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।