• গণধোলাইয়ের হাত থেকে অভিযুক্তকে বাঁচাতে গিয়ে ‘আক্রান্ত’ পুলিশ, নেপথ্যের মালদহের ‘মাতব্বর’রা?
    প্রতিদিন | ২৬ আগস্ট ২০২৫
  • বাবুল হক, মালদহ: রাজ্যে ফের আক্রান্ত পুলিশ।  অভিযুক্ত এক যুবককে গণধোলাইয়ের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেতে হল পুলিশকে। আক্রান্ত এএসআই সহ পাঁচ পুলিশ কর্মী। এমনকি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসিকেও হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের জিপেও উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার সুলতান নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাটিওন গ্রামে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের আকার নেয় । এলাকায় পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। অভিযোগ, স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার নির্দেশেই নাকি এই ঘটনা ঘটেছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামেরই এক তরুণী মাঠে গরু বাঁধতে যায়। অভিযোগ, সেই সময় স্থানীয় এক যুবক কাগজে লিখে তাঁকে ফোন নম্বর দিতে যায়। তা নিতে ওই তরুণী অস্বীকার করলে ওই যুবক অশ্লীল ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। কটূক্তি করা হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনা জানাজানি হতেই তরুণী পরিবার স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে পুলিশ ধরতে গেলে জানা যায়, ইভটিজিংয়ের ঘটনায় গ্ৰামে সালিশি সভা বসানো হয়েছে। জিয়াউল হক নামে এক ব্যক্তির নির্দেশেই নাকি সেই সালিশি সভা বসে।

    স্থানীয়দের দাবি, জিয়াউল তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য। অভিযোগ, সালিশি সভায় মাতব্বরদের নির্দেশেই অভিযুক্ত যুবককে গণধোলাই দেওয়া হয়। তাঁকে পুলিশ উদ্ধারের চেষ্টা করতেই গ্রামের লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বাঁশ, লাঠি হাতে পুলিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন গ্রামের লোকজন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় ইট-পাথর। আর তাতেই আহত হন একাধিক পুলিশ কর্মী। মুহূর্তে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের আকার নেয়। ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যান হরিশচন্দ্রপুর থানার আইসি মনোজিৎ সরকার। অভিযোগ, তাঁকেও হেনস্তা করা হয়। বিচার সভার মাতব্বরদের নির্দেশেই এই ঘটনা বলে দাবি।

    ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়। শুরু হয় ধরপাকড়। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত যুবককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর থমথমে গোটা এলাকা। পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে গোটা গ্ৰাম। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। অন্যদিকে ঘটনায় আহত দুই পুলিশ অফিসার-সহ ৫ পুলিশ কর্মীকে হরিশচন্দ্রপুরে গ্ৰামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সোমবার দুপুরে হরিশচন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে যুবতীর পরিবার। কিন্তু পুলিশ ধরার আগে গ্রামবাসীরা অভিযুক্ত তরুণকে নিয়ে সালিশি সভা বসায় গ্রামের মধ্যেই। খবর পেয়ে সালিশি সভা বন্ধ করে অভিযুক্ত যুবককে উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। আর সেখানে গ্রামবাসীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার দুই এএসআই অফিসারকে।

    অন্যদিকে জিয়াউল হকের দাবি, তিনি কোনও সালিশি সভা বসানোর নির্দেশ দেননি। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। যদিও সালিশি সভা বসানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
  • Link to this news (প্রতিদিন)