• চোদ্দ বছরের ব্যাঙ্কিং অভিজ্ঞতা! তবুও পথে বসে ভিক্ষা চায়লেন এই ব্যক্তি, কী তাঁর ইতিহাস?  
    আজকাল | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  •  

    আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ১৪ বছরের ব্যাঙ্কিং অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তি রাস্তায় বসে সাহায্য চাইলেন। শহরের সাফল্যের আড়ালের এক করুণ চিত্র ফুটে উঠল। বেঙ্গালুরু, যাকে ভারতের প্রযুক্তি রাজধানী বলা হয়, একইসঙ্গে এই শহরকে সাধারণত কাজের সুযোগ ও উন্নতির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কিছুদিন আগের একটি ঘটনা শহরের চিরাচরিত গ্ল্যামারের পেছনের বাস্তবতা সামনে নিয়ে এসেছে। এক ব্যক্তি, যিনি ১৪ বছর ধরে ব্যাঙ্কিং খাতে কাজ করেছেন, তাঁকে শহরের এক ব্যস্ত ট্র্যাফিক সিগন্যালে ফুটপাথে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। তাঁর হাতে একটি বোর্ড ছিল। সেখানে লেখা ছিল, 'আমার চাকরি নেই, ঘর নেই, দয়া করে সাহায্য করুন। আমার ১৪ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা আছে।'

    এই দৃশ্য অনেককেই নাড়া দিয়েছে। সাধারণভাবে এত অভিজ্ঞতা থাকলে মানুষ কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থানে থাকে বলেই ধারণা করা হয়। তাই তাঁর এহেন অবস্থা দেখে কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে আবেগপ্রবণ হয়ে তাঁকে কঠিন সময়ের শিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি আবার অনেকে মনে করছেন, তাঁর নিজের ভুল সিদ্ধান্তই হয়তো এই পরিণতির কারণ।

    একজন রেডিট ব্যবহারকারী এই ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, 'ভারতের সিলিকন ভ্যালির সিগন্যালে এই মানুষটিকে দেখলাম। খুব কষ্টের হলেও ভাবছি- এটা কি সমাজের ব্যর্থতা, নাকি তাঁর নিজের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের ফল?'

    ইতিমধ্যেই এই পোস্টের নিচে নানা ধরণের মন্তব্য দেখা যায়। একজন মন্তব্য করে বলেছেন, 'উনি কি শারীরিকভাবে অক্ষম? যদি হয়, তবে আমার সহানুভূতি আছে। কিন্তু যদি তিনি সুস্থ হন, তবে বেঙ্গালুরুর মতো শহরে যেখানে কাজের অভাব নেই, সেখানে এভাবে বসে থাকা অযৌক্তিক। হয়তো বেতন কম, কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট কাজ পাওয়া যায়।'

    ঘটনার প্রেক্ষিতে আরেকজন লিখেছেন, 'একজন পুরুষের জীবন—যতক্ষণ না উপার্জন করো, ততক্ষণ তোমার সম্মান নেই। তাকে না জেনে বিচার করা কঠিন।'একজন মন্তব্যকারী বলেন, 'আমি রূঢ় হতে চাই না, কিন্তু এখন সবাই জীবনে সংগ্রাম করছে। কারও জীবন সহজ নয়, যদি না সে ধনী পরিবার থেকে আসে। প্রত্যেককে নিজের পথ খুঁজে নিতে হয়, আর বেঙ্গালুরু এমন এক শহর, যেখানে চেষ্টা করলে উপার্জনের পথ পাওয়া যায়। ওই ব্যক্তি দেখতে তরুণ, যদি শারীরিক সমস্যা না থাকে, তবে তাঁর এমন অবস্থানে থাকার কথা নয়।'

    কেউ কেউ আবার বলছেন,'এটা আমাদের দেশের কঠিন বাস্তবতা, কলেজ পাশ করা শিক্ষার্থীদের মাত্র ১ শতাংশের জন্যই ভালো চাকরি থাকে'আরেকজন লিখেছেন, 'অনেকেই বলছেন তিনি ডেলিভারি বা গাড়ি চালানোর মতো কিছু কাজ করতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দীর্ঘদিন বেকার থাকলে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, বিষণ্নতায় ভোগে। কাজ করার ইচ্ছাশক্তিও হারিয়ে যায়।'

    একজন দাবি করেছেন, ওই ব্যক্তিকে তাঁরা চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি বিরক্ত হন, এমনকী আগ্রহও দেখাননি। সেই ব্যক্তি আরও জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি প্রতি সোমবার সোমেশ্বর মন্দিরের সামনে এবং মঙ্গলবার হালসুরুর সুব্রামান্য মন্দিরের বাইরে বসে থাকেন।

    প্রসঙ্গত এই ঘটনা আমাদের সমাজের এক করুণ বাস্তবতা তুলে ধরে- যেখানে চাকরি থাকা, অভিজ্ঞতা থাকা বা শহরের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ পিছিয়ে পড়ে যান। এর পেছনে ব্যক্তি বিশেষের সিদ্ধান্ত যেমন ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনি থাকতে পারে মানসিক স্বাস্থ্য বা সামষ্টিক সমাজব্যবস্থার ব্যর্থতাও।
  • Link to this news (আজকাল)