দুই ভাইয়ের এক বউ, সহধর্মিনীকে নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু! বিয়ের কয়েক মাস পরেই কি জীবন দুর্বিষহ?
আজকাল | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত জুলাই মাসেই ভারতীয় বিবাহের এক প্রাচীন রীতি ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছিল সমাজমাধ্যমের পাতায়। রীতির নাম, হট্টি পলিয়ান্দ্রি। হিমাচল প্রদেশের এক রীতি অনুযায়ী, এক পাত্রীকে দুই ভাই বিয়ের করেন। যা ঘিরে সাধারণ বিয়ের মতোই উদযাপনে মেতে ওঠে গোটা পরিবার। এমনকী স্ত্রীকে নিয়েও দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনও ঝগড়া, অশান্তি হয় না। দুই স্বামীর সঙ্গে মিলেই সংসার করেন কনে।
তবে কয়েক দশকে এই রীতি অনেকেই পালন করেন না। বিশেষত বিয়ে ও সংসার সংক্রান্ত নানা ঝামেলার কারণে প্রাচীন এই রীতি প্রায় মুছে যাওয়ার পথেই ছিল। সম্প্রতি হিমাচলের বাসিন্দা দুই ভাই সেই প্রাচীন রীতি মেনে বিয়ে করায়, আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। রীতিটি যাতে সম্প্রদায় থেকে মুছে না যায়, তার জন্যেই এক তরুণীকে দু'জনে বিয়ে আবারও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগি দু'জনেই হিমাচল প্রদেশের সিরমুর জেলার বাসিন্দা। অন্যদিকে পাত্রী সুনিতা চৌহান কুনহাট এলাকার বাসিন্দা। দুই পাত্র ও এক পাত্রী, তিনজনেই হট্টি সম্প্রদায়ের বাসিন্দা। নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিয়ের চল রয়েছে। পলিয়ান্দ্রি রীতি মেনে তাঁরা বিয়ে করেন। সুনিতা একসঙ্গে প্রদীপ ও কপিলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
দিন কয়েক আগেই একটি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেন কপিল নেগি। যেখানে তিনি লেখেন, 'জীবন আর আগের মতো নেই!' সঙ্গে দুঃখের ইমোজি। এই পোস্ট দেখেই নেটিজেনদের সন্দেহ হয়েছিল। তবে কি বিয়ের দুই মাস যেতে না যেতেই দুই ভাইয়ের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে? এক বউকে নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা ক্রমেই বাড়ছে?
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এরপরই প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগি জানিয়েছেন, স্ত্রীকে নিয়ে কোনও সমস্যাই হয়নি তাঁদের মধ্যে। বরং পিতৃ বিয়োগে মুষড়ে পড়েছেন তাঁরা। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের বাবা ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত সপ্তাহেই তাঁদের বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাবার মৃত্যুর পরেই দুই ভাই লেখেন, 'জীবন আর আগের মতো নেই। আপনি চলে যাওয়ার পর জীবনে শুধু শূন্যতা। আপনি শুধুমাত্র আমাদের বাবা ছিলেন না, আপনি আমাদের শক্তি ছিলেন। আপনাকে ছাড়া বাড়িটাও বড্ড ফাঁকা।' এমন পোস্টে নেটিজেনরাও শোকপ্রকাশ করেছেন। বৃদ্ধের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন সকলেই।
গত মাসেই প্রদীপ জানিয়েছেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই আমাদের ট্রোল করছেন। কিন্তু তাতে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের এটাই প্রাচীন রীতি। সেই রীতি মেনেই বিয়ে করেছি। এলাকায় এমন দম্পতি আরও অনেক আছে। এই রীতি নিয়ে এখনও বিয়ে হয়। আমাদের জাতির প্রাচীন রীতি মেনে বিয়ে করায় আমি লজ্জিত নই!'
অন্যদিকে কপিল জানিয়েছেন, 'আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমাদের খবরের শিরোনামে আসার কোনও ইচ্ছে ছিল না। আমরা শুধুমাত্র রীতি মেনেই বিয়ে করেছি। এমন বিয়ের একটাই উদ্দেশ্য, সংসারে সকলে শান্তিতে যৌথভাবে থাকা। তাতে ভালবাসাও অটুট থাকে। আমাদের মধ্যে কোনও ঈর্ষা নেই। আমাদের জমি, সম্পত্তি সীমিত। তাই নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতেও সুবিধা হয়।'
হিমাচল প্রদেশের হট্টি সম্প্রদায়ের এই পলিয়ান্দ্রি বিয়ের রীতি দ্রৌপদী প্রথা নামেও পরিচিত। হিমাচলের সিরমুর ছাড়াও, উত্তরাখণ্ডের কয়েকটি এলাকায় এই রীতি মেনে বিয়ের চল রয়েছে। একাধিক ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কনে। পৈতৃক ভিটে যাতে ভাগাভাগি না হয়, কোনও স্ত্রী যাতে এক ভাইয়ের মৃত্যুর পর বিধবা না হন, তার জন্যেই একাধিক ভাইয়ের সঙ্গে একজনের বিয়ে দেওয়া হয়। এতে পরিবারে সুখ, শান্তিও বজায় থাকে।
জানা গেছে, প্রদীপ জল শক্তি দপ্তরের কর্মী। কপিল বিদেশে হসপিটালিটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে কর্মরত। দু'জনে দুই দেশে থাকলেও, সম্প্রদায়ের প্রাচীন রীতি মেনে বিয়েতে রাজি হন। সুনিতার সঙ্গে আলাপ পরিচয়ের পর তাঁদের পছন্দ হন। দু'জনেই সুনিতাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন দ্রুত। সুনিতা জানিয়েছেন, 'আমাকে কেউ বিয়ের জন্য জোরাজুরি করেননি। দ্রৌপদী প্রথার বিয়ের রীতি আমি আগে থেকেই জানতাম। সব রীতি, রেওয়াজ জেনেই এই বিয়েতে আমি সম্মতি জানিয়েছিলাম।'