চালককে প্রকাশ্যে ঠাটিয়ে থাপ্পড়! পালটা চালকও মহিলা যাত্রীর গায়ে হাত তোলেন, বাসে চরম উত্তেজনা, যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক
আজকাল | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুতে যাত্রী ও বাসচালকের মধ্যে চরম উত্তেজনা। বেঙ্গালুরুর পীনিয়া অঞ্চলে টুমকুরু রোডে একটি বিএমটিসি (বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন) বাসে এক মহিলা যাত্রী ও চালকের মধ্যে তীব্র বচসা শুরু হয়। এহেন বাকবিতণ্ডার মুহূর্ত নিমেষে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। ঘটনার ভিডিও একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মোবাইলে ধারণ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ওই মহিলা চালকের আসনের ঠিক পেছনের র্যাম্প বেয়ে উঠে এসে তর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন। এরপর একটা পর্যায়ে হঠাৎ করেই চালককে চড় মারেন। ফলস্বরূপ বাসচালকও পাল্টা এক চড় মারেন ওই মহিলা যাত্রীকে। ঠিক কী কারণে এই ঝগড়া শুরু হয়েছিল, তা তদন্তাধীন।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, বিএমটিসিকে ঘিরে আরেকটি বিতর্ক আবারও সামনে উঠে আসে। কিছুদিন আগেই একটি ভায়ু বাজ্র (এয়ারপোর্ট বাস) পরিষেবায় যাত্রী আদিত্য রাজ আগরওয়াল অভিযোগ করেন, গুগল ম্যাপে দেখানো একটি স্টপেজে নামতে চাওয়ায় বাসচালক ও কন্ডাক্টর তাঁকে মৌখিক ও শারীরিকভাবে চরম হেনস্তা করেন। তিনি এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ শেয়ার করেন। এমনকী বেঙ্গালুরু পুলিশ ও বিএমটিসিকে ট্যাগ করে জানান যে, কন্নড় ভাষা না বলার কারণে তাঁকে লক্ষ্য করা হয়েছে।
তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জনমতের একটা বড় অংশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে চলে যায়। অনেক যাত্রী ও কন্নড়পন্থী গোষ্ঠী বিএমটিসি কর্মীদের পক্ষ নিয়ে বলেন, ভায়ু বাজ্র বাসগুলি নির্ধারিত স্টপ ছাড়া অন্য কোথাও থামে না। সেক্ষেত্রে গুগল ম্যাপে দেখালেও নয়। কেউ কেউ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে ‘হিন্দি ভিকটিম কার্ড’ খেলার অভিযোগ তোলেন এবং দাবি করেন যে, বাসকর্মীরা ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বোঝানোর চেষ্টা করলেও আগরওয়াল ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের হেনস্থা করেন।
চাপে পড়ে আগরওয়াল পরে তাঁর পোস্ট মুছে ফেলেন। তবুও বিষয়টি এখানেই থেমে যায়নি। কন্নড়পন্থী কিছু কর্মী মহাদেবপুরা থানায় আগরওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন এবং বিএমটিসি কর্মীদের পক্ষে জোরালো প্রশ্ন ছোঁড়েন করেন।
পরপর এই দুই ঘটনায় যাত্রী ও বাসকর্মীদের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, যাত্রীদের সঙ্গে বাসচালক ও কন্ডাক্টরের সম্পর্ক এবং ভাষাগত ও তথ্যগত যোগাযোগের অভাবকে কেন্দ্র করে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। জনপরিবহনে এমন সংঘাত এড়াতে বিএমটিসির পক্ষ থেকে আরও ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এখন জোরালোভাবে অনুভূত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বেঙ্গালুরুতে একটি অটোরিকশার পেছনে ঘৃণামূলক বার্তা লেখা ঘিরে চরম বিতর্ক। অটোর পেছনে লেখা বার্তা ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে শহরজুড়ে। বার্তাটি হিন্দিভাষী অটোচালকদের উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে: 'গো ব্যাক, ইল্লিগাল হিন্দিওয়ালা অটো'স। নো পারমিট/ নো পুলিশ ভেরিফিকেশন/ নো ডিসপ্লে/ নো ব্যাজ/ নো ডিএল। মোর দ্যান ১০,০০০ অটো'স ইন কে আর পুরম অ্যান্ড মহাদেবাপুরা জোন' (GO BACK, Illegal Hindi wala autos. No permit/ no police verification/ no display/ no badge/ no DL. More than 10,000 autos in KR Puram and Mahadevapura zone।) অর্থাৎ, বেঙ্গালুরুর নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে নাকি ১০,০০০–এরও বেশি হিন্দিভাষী চালক বেআইনিভাবে অটো চালাচ্ছেন, যাদের পারমিট, পুলিশ ভেরিফিকেশন, ব্যাজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র- কিছুই নেই।
এই ছবি ইনস্টাগ্রামে 'নাম্মাবেঙ্গালুরু’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল,'স্যাড টু সি দিস। উই সুড নট বি দ্যাট হেটফুল টুওয়ার্ডস পিপল ওয়ার্কিং লিগালি,ফলোয়িং অল রুলস' (“Sad to see this. We should not be that hateful towards people working legally, following all rules.”) অর্থাৎ, আইন মেনে কাজ করা লোকজনের প্রতি এতটা ঘৃণা ছড়ানো উচিৎ নয়।
পোস্টটি ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল ঝড় ওঠে। বহু ব্যবহারকারী এই ঘটনায় তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই বলেন, এই ধরনের বার্তা শুধু ঘৃণা ও বিভাজনই বাড়ায়, শহরের শান্তি নষ্ট করে। একজন মন্তব্য করে বলেন, 'এই ধরনের ঘৃণা ও অযথা দোষারোপের জন্যই মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে শহরে ট্র্যাফিক বাড়ছে। বেঙ্গালুরুতে সাধারণ বোধ ও নাগরিক সচেতনতা হারিয়ে গিয়েছে। এটা শুধু ভাষা বা রাজ্যের ভিত্তিতে নয়, পুরো সমাজের সমস্যা।'