মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ফুঁসছে নদী, নিমেষে তলিয়ে গেল ১০ জন শ্রমিক সহ ট্রাক্টর, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফের মৃত্যুমিছিল উত্তরাখণ্ডে
আজকাল | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সেপ্টেম্বরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রেহাই নেই উত্তরাখণ্ডে। আবারও মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে মৃত্যুমিছিল। এবার ঘটনাস্থল দেরাদুন। মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে টন নদীতে তলিয়ে যায় একটি ট্রাক্টর। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ট্রাক্টরে কমপক্ষে দশজন ছিলেন। সকলেই শ্রমিক। স্থানীয়দের অনুমান, টন নদীতে তলিয়ে কমপক্ষে ছ'জনের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নদীর মাঝে আটকে ওই ট্রাক্টরটি। তাতে অন্ততপক্ষে দশজন শ্রমিক ছিলেন। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নদীতে আটকে পড়ার পরেই সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে শুরু করেন ওই শ্রমিকরা। হাত নাড়িয়ে স্থানীয়দের ডাকার চেষ্টা করেন। নদীর পাড়ে সেই সময় কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু নদীর জল যেভাবে ফুঁসছিল, স্থানীয়রা কীভাবে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে যাবেন, তা স্থির করতে পারছিলেন না।
স্থানীয়দের চোখের সামনেই শ্রমিক সহ ট্রাক্টরটি উল্টে যায়। নিমেষের মধ্যে তলিয়ে যায় ট্রাক্টরটি। খোঁজ মেলে না শ্রমিকদের। স্থানীয়রাও চিৎকার করতে থাকেন সেই সময়। কী কারণে ওই শ্রমিকরা ট্রাক্টর নিয়ে মাঝ নদীতে পৌঁছল, তা জানা যায়নি। তবে অনেকেরই অনুমান, তাঁরা সম্ভবত মাইনিংয়ের কাজ করছিলেন।
প্রসঙ্গত, রাতভর ভারী বৃষ্টির জেরে আবারও মেঘ ভাঙা বৃষ্টি উত্তরাখণ্ডে। মঙ্গলবার ভোররাতে আচমকাই প্রবল বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন বিপর্যস্ত। রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্যোগে ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর। বহু দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে গাড়িও।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে চলছে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান। খবর পেয়ে জেলা শাসক সাভিন বংশল, এসডিএম কুমকুম জোশি এবং অন্যান্য আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। জেলা শাসক উদ্ধারকর্মীদের দ্রুত নিখোঁজদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। মএনডিআরএফ, এসডিআরএফ, পিডব্লিউডি-সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা বুলডোজার নিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এদিন ভারী বৃষ্টির কারণে দেরাদুনে সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শাসক।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং পরিস্থিতি স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করছেন। এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘দেরাদুনে গত রাতে প্রবল বর্ষণে কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ ও পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নেমেছে। আমি নিজে বিষয়টির উপর নজর রাখছি’। মেঘভাঙার পর ঋষিকেশে চন্দ্রভাগা নদী সকাল থেকেই উচ্ছ্বসিত। নদীর জল রাস্তায় ঢুকে পড়ায় তিনজন মাঝপথে আটকে পড়েন। পরে এসডিআরএফের দল তাঁদের উদ্ধার করে। অন্যদিকে, পিথোরাগড় জেলায় ভারী ভূমিধসে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা খুলে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে’।
প্রবল বর্ষণ, মেঘভাঙা আর ভূমিধসে এই বছরের বর্ষায় ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের একাধিক এলাকা বিপর্যস্ত। উত্তরকাশীর ধরালি-হরশিল, চামোলির থারালি, রুদ্রপ্রয়াগের চেনাগাড়, পাউরির সেঁজি, বাগেশ্বরের কাপকোট ও নৈনিতালের একাধিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছরের এপ্রিল থেকে উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১২৮ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৯৪ জন। এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরাখণ্ড সফরে দেরাদুনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ পর্যালোচনা করেন। তিনি বিপর্যস্ত অঞ্চলের জন্য ১,২০০ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন।