আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজেপি শাসিত রাজ্য ওড়িশায় আবারও ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে। এবার স্বামীর সহকর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন এক যুবতী। ধর্ষণের পর তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। বিষয়টি বাইরে ফাঁস করলেই যুবতীকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার বালাঙ্গীর জেলায়। ১১ সেপ্টেম্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা যুবতী। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, এক মাস আগে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
পুলিশ আধিকারিক লক্ষ্মী নারায়ণ মারান্ডি জানিয়েছেন, যুবতী ও তাঁর স্বামী ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। স্বামীর এক সহকর্মী প্রায়ই তাঁদের বাড়িতে আসত। ক্রমেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। গত ১৩ আগস্ট রাত সাতটা থেকে আটটার মধ্যে অভিযুক্ত যুবক আচমকাই তাঁদের বাড়িতে আসে। সেই সময় যুবতী একাই ছিলেন বাড়িতে। স্বামী কাজের সূত্রে বাইরে ছিলেন।
সেদিনই ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে যুবতীকে ধর্ষণ করে ওই অভিযুক্ত যুবক। ধর্ষণের পর তাঁকে খুনের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। এক মাস পর কেন যুবতী অভিযোগ জানালেন? পুলিশকে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, খুনের হুমকির কারণেই তিনি আতঙ্কে ছিলেন। পাশাপাশি সামাজিক কারণে, পরিবারের সম্মানহানির কারণে ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেননি তড়িঘড়ি।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক বর্তমানে পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ১১ আগস্ট, ১৩ বছরের এক কিশোরীর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। সেই ওড়িশার ঘটনা। বালেশ্বর, বালাঙ্গা ও কেন্দ্রপাড়ার পর এবারের ঘটনাস্থল ওড়িশার বারগড় জেলা। ৩০ দিনের মাথায় একই ঘটনা, চারবার। ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছিল, মামার বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। গ্রামের ফুটবল মাঠে অচৈতন্য অবস্থায় কিশোরীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে একাধিক জায়গায় পোড়া দাগ ছিল। দগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বুরলার বীর সুরেন্দ্র সাঁই ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসেই ওড়িশার একাধিক কলেজ পড়ুয়া গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রপাড়ায় তৃতীয়বার এই ঘটনা ঘটেছে। এক কলেজ ছাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। তিনিও গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন। পরিবারের তরফে ওই ছাত্রীর প্রেমিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। মানসিক নির্যাতন ও হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রীর প্রেমিকের বিরুদ্ধে। বারবার তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হত বলেও অভিযোগ জানিয়েছে পরিবার।
এর আগে গত ১২ জুলাই ওড়িশার বালেশ্বরের ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ফকির মোহন কলেজের বি.এড-এর ছাত্রী ছিলেন এক তরুণী। ওই কলেজের হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট সমীর কুমার সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। পয়লা জুলাই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান তরুণী। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে, উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু সাতদিন পার করেও কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও মাথা ব্যথা ছিল না। অবশেষে কলেজের মধ্যে প্রিন্সিপালের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তরুণী ও তাঁর বন্ধুরা।
কলেজের গেটের সামনে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। দলে ছিলেন তরুণীও। হঠাৎ সকলের মাঝখান থেকে উঠে সোজা কলেজের করিডোরে চলে যান। সেখানে গিয়েই গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাঁর শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখেই ছুটে আসেন সহপাঠীরা। তাঁরাও আগুন নেভাতে তোড়জোড় শুরু করেন। কয়েক মিনিট পর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দুই দিন পরেই তরুণীর মৃত্যু হয়।
এরপর গত ১৯ জুলাই ওড়িশার পুরী জেলার বালাঙ্গা থানার অন্তর্গত এলাকায় আরও একটি এমন ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ঘটনার দিন তিনজন বাইক আরোহী প্রথমে এক তরুণীকে অপহরণ করে। পরে তারা মেয়েটিকে ভরগবী নদীর তীরে নিয়ে যায়। বাইবর গ্রাম সংলগ্ন একটি নির্জন জায়গায় তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই তরুণীর গায়ে প্রথমে একটি দাহ্য পদার্থ ঢালে৷ এরপর তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর।