• বাবরের প্রার্থনা! 'চোখের সামনে মেয়েকে মরতে দিতে পারি না! আমার কিডনি দিয়ে দেব ওকে, যদি মেয়ে নতুন জীবন পায়'... আবেগি মা...
    ২৪ ঘন্টা | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বিধান সরকার: বাবা-মায়ের সব সময়ের জন্যই প্রার্থনা-- আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। আরও একধাপ এগিয়ে মোগলসম্রাট বাবর অসুস্থ হুমায়ুনের শয্যার চারিদিকে ঘুরে-ঘুরে প্রার্থনা করেছিলেন, ঈশ্বর যেন তাঁর সন্তানকে রোগমুক্ত করেন, বরং তিনি তাঁর শরীর পেতে সেই রোগ গ্রহণ করবেন। বাবরের এই প্রার্থনার মধ্য়েই লুকিয়ে সন্তানের জন্য বাবামায়ের উদ্বেগ ও ভালোবাসার চিহ্ন। প্রায় তেমনই এক ঘটনা জানা গেল পান্ডুয়ায়।

    পান্ডুয়ার খিরখুন্ডি মাঝেরপাড়ায়

    পান্ডুয়ার খিরখুন্ডি মাঝেরপাড়া গ্রামে বাড়ি জাহির হোসেন সেখের। বারো বছর আগে পান্ডুয়ারই সরাই কুলটি এলাকার আজমিরা খাতুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের ন'বছরের এক মেয়ে রয়েছে। এদিকে বছর পাঁচেক ধরে কিডনির অসুখে ভুগছেন আজমিরা। আজমিরা বলেন, শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় ১৮ মাস ধরে ডায়ালিসিস চলছে। হাঁটাচলা করতে পারতাম না। একবার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে কিডনি থেকে পুঁজ বের করে ডাক্তার। এখানেও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। আমরা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি।

    কে দেবে কিডনি?

    ডাক্তার বলেছেন, দুটো কিডনিই খারাপ হয়ে গিয়েছে। একমাত্র কিডনি প্রতিস্থাপন করলে তবেই জীবন বাঁচতে পারে তাঁর। আজমিরার স্বামী জাকির হোসেন শেখ দিনমজুর। চিকিৎসার খরচ সামলাতে নাজেহাল অবস্থা তাঁর। এর মধ্যে কোথায় কিডনি পাবেন, কে দেবে-- এই চিন্তাই দিনরাত মাথায় ঘুরছিল। আপাতত একটা কিডনি হলেই প্রাণে বাঁচতে পারে আজমিরা। 

    এগিয়ে এলেন মা

    এগিয়ে এলেন আজমিরা খাতুনের মা জাহিরা বিবি। তিনি জানিয়ে দেন, মেয়েকে বাঁচাতে নিজের একটা কিডনি দিয়ে দেবেন তিনি। যে সন্তানকে জন্ম দেওয়ার পর কোলেপিঠে মানুষ করেছেন, সেই আত্মজাকে এবার নতুন জীবন দিতে চান তিনি। জাহিরা বিবি জানান, কিডনির জন্য অনেক জায়গায় চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোথাও পাইনি। আমার সঙ্গে মেয়ের কিডনি মিলেছে, চিকিৎসকদের কথামতো সমস্ত পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। জাহিরা বলেন, চোখের সামনে মেয়েকে মরতে দিতে পারি না। তাই আমার একটা কিডনি দিয়ে দেব মেয়েকে। তাতে যদি মেয়ে নতুন জীবন পায়, সেটাই ভালো।

    আবেদন

    এসএসকেএম হাসপাতালে চলছে আজমিরার চিকিৎসা। মা-মেয়ের সব পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। ডাক্তারবাবুরা পুজোর পর ভর্তি হতে বলেছেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরেও আসতে পারে নানা জটিলতা। অনেক ওষুধ লাগবে। মা মেয়ে দুজনের জন্যই অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। সেই টাকা আসবে কোথা থেকে, এখন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে আজমিরার পরিবারের। জাকির হোসেন বলেন, নিজের বসতবাড়িটা বিক্রি করে দেওয়ার কথা একবার ভেবেছিলাম। বিক্রি করলে হয়তো লাখপাঁচেক টাকা হবে। কিন্তু তারপর পথে বসতে হবে। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন গ্রামের মানুষের কাছে আবেদন করেছি। 

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)