আজকাল ওয়েবডেস্ক: চণ্ডীগড় বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে শুক্রবার এক আবেগঘন অনুষ্ঠানে অবসর নিল ভারতীয় বায়ুসেনার কিংবদন্তি যুদ্ধবিমান মিগ-২১। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একে কেবল একটি যুদ্ধবিমান নয়, বরং ভারত-রাশিয়ার গভীর সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “মিগ-২১ শুধু একটি বিমান নয়, এটি এক শক্তিশালী যন্ত্র, জাতীয় গর্ব এবং প্রতিরক্ষা ঢাল, যা দেশের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলেছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে।”
ইতিহাসের সাক্ষী মিগ-২১রাজনাথ সিং স্মরণ করিয়ে দেন, মিগ-২১ দীর্ঘ সময় ধরে বহু বীরত্বগাথার সাক্ষী হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, কারগিল সংঘাত, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক কিংবা অপারেশন সিন্ধুর মতো ঐতিহাসিক অভিযানে এই বিমান ভারতের তিরঙ্গার মান বাড়িয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষায়, “প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে মিগ-২১ ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। তাই এই বিদায় কেবল একটি বিমানের নয়, বরং আমাদের জাতীয় গৌরব, স্মৃতি ও সাহসের যাত্রার বিদায়।”
শুক্রবারের অনুষ্ঠানে রাশিয়ান উৎসের এই যুদ্ধ বিমানের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। শেষবারের মতো আকাশে ওড়ে ২৩ নম্বর স্কোয়াড্রন “প্যান্থারস” এর অন্তর্গত মিগ-২১। এয়ার চিফ মার্শাল এ. পি. সিং নিজেই “বাদল ৩” কলসাইন নিয়ে বিমানের শেষ sortie পরিচালনা করেন।অনুষ্ঠানকে আরও স্মরণীয় করে তুলেছিল ভারতীয় বায়ুসেনার নানা প্রদর্শনী। আকাশগঙ্গা প্যারাশুট টিম ৮,০০০ ফুট উচ্চতা থেকে লাফিয়ে পড়ে শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য উপহার দেয়। তিন বিমানের বাদল ও চার বিমানের প্যান্থার ফরমেশন ফ্লাইপাস্ট দর্শকদের মুগ্ধ করে। সুর্যকিরণ অ্যারোবেটিক টিম তাদের শ্বাসরুদ্ধকর কসরত দিয়ে অনুষ্ঠান মাতিয়ে তোলে, আর এয়ার ওয়ারিয়র ড্রিল টিম নিখুঁত শৃঙ্খলায় প্রদর্শনী করে। শেষে আকাশে দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত যোদ্ধাকে সম্মানসূচক স্যালুট।
মিগ-২১ ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম সুপারসনিক যুদ্ধবিমান। ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে এর আগমন ভারতীয় বায়ুসেনাকে একেবারে নতুন যুগে প্রবেশ করায়। প্রায় ৮৭০টি মিগ-২১ কেনা হয়েছিল, যা কয়েক দশক ধরে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে।
১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ, ১৯৯৯ সালের কারগিল সংঘাত এবং ২০১৯ সালের বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকে এর অবদান অমলিন। তবে এই বিমানকে ঘিরে বিতর্কও কম ছিল না। বছরের পর বছর একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা তার নিরাপত্তা রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তবুও, মিগ-২১-কে সর্বদা ভারতীয় বায়ুসেনার নির্ভরযোগ্য যুদ্ধসঙ্গী হিসেবেই দেখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রাক্তন এয়ার চিফ এস. পি. ত্যাগী, বি. এস. ধানোয়া এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা সহ বহু বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের সরকারি এক্স পোস্টে লিখেছে—“ছয় দশকের সেবা, অসংখ্য সাহসিকতার গল্প, জাতির গর্বকে আকাশে বহন করা এক যুদ্ধঘোড়া। মিগ-২১ সর্বদা আমাদের স্মৃতিতে অমলিন থাকবে।”
যুদ্ধবিমান হলেও মিগ-২১ কেবল ইঞ্জিন আর ধাতব খোলস নয়, এটি ভারতের আত্মবিশ্বাস, জাতীয় গর্ব ও বীরত্বগাথার প্রতীক। ছয় দশকের অনন্যসাধারণ যাত্রা শেষে এই যুদ্ধবিমান বিদায় নিলেও, তার কীর্তি চিরকাল বেঁচে থাকবে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার ইতিহাসে।