‘পাশে আছি’, কারুরে পদপিষ্টে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললেন বিজয়
আজকাল | ০৮ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: তামিলনাড়ুর কারুরে রাজনৈতিক সভায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক পদপিষ্টের দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলেন অভিনেতা-রাজনীতিবিদ বিজয়। সূত্রের খবর, তামিলাগা ভেট্ট্রি কাজগম (TVK) দলের প্রধান বিজয় ইতিমধ্যেই ৪ থেকে ৫টি পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন, যাঁরা এই দুর্ঘটনায় প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে মহিলা ও শিশু—দু’জনেই ছিলেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর কারুরে বিজয়ের নির্বাচনী র্যামলিতে ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনায় অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয় এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হন। এই দুর্ঘটনায় আগামী বছরের নির্বাচনের আগে তামিলনাড়ুতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তবে ঘটনাটি নিয়ে না বিজেপি, না শাসক ডিএমকে—দু’দলই বিজয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও আক্রমণ করেনি।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রতিটি ভিডিও কল প্রায় ২০ মিনিট ধরে হয়, যেখানে বিজয় পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমাদের পাশে থাকব।’ ঘটনার পরদিনই বিজয় ঘোষণা করেছিলেন, প্রতিটি মৃতের পরিবারের হাতে ২০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। বিজয়ের দলীয় সূত্র আরও জানিয়েছে, ভিডিও কলে কথা বলার সময় তাঁরা সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে অনুরোধ করেছেন যেন কেউ সেই মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও ধারণ না করেন। কারুর রাজনৈতিক সভায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের।
আহতের সংখ্যা বহু। প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতদের পরিবারের সদস্য ও ঘটনাস্থলের চিত্র মিলিয়ে উঠে আসে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার রূপকথা। বিনোদ কুমার, যিনি এক নিহতের ভগ্নিপতি, জানান, চারজনের একটি পরিবার সারাদিন অপেক্ষা করছিল শুধুমাত্র বিজয়কে একবার দেখার জন্য। তিনি বলেন, ‘অনেক রাত হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু ওরা বিজয় স্যারকে দেখতে চেয়েছিল। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত বিদ্যুৎ চলে যায়। ঠিক তাঁর আগমনের আগে হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে চাপাচাপি সৃষ্টি হয়। আমার শ্যালিকা ও তাঁর দুই সন্তান ১১ ও ৭ বছরের সেখানেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। সন্তানরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করছিল, কিন্তু মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়’। ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হয়েছে শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে, জয়ন্তী (৪৫) নামে এক মহিলা তাঁর ছেলে অশ্বিন কুমারনের সঙ্গে সভায় গিয়েছিলেন। অশ্বিন অভিযোগ করেন, পুলিশ ও TVK কর্মীরা কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘কেউ আমাদের জানাচ্ছিল না অ্যাম্বুলেন্স কোথায়। ভিড়ের মধ্যে জল ছিল না, রাস্তাও ছিল খুব সরু।’ ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল জুতো, ভাঙা খুঁটি, ছেঁড়া পতাকা, বোতল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সামগ্রী। অনেককে ধাক্কা খেয়ে পাশের নর্দমায় পড়ে যেতে হয়। কেউ কেউ আশ্রয় নিতে ছাদে উঠতে গিয়ে পড়ে যান। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি বলেন, ‘মানুষ বিজয়ের নাম ধরে চিৎকার করছিল। অনেকে বুঝতেই পারেনি যে পদপিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন অন্যরা। যারা পড়ে যাচ্ছিল, তাদের ওপরেই অন্যরা হুড়মুড় করে পড়ে যাচ্ছিল।’
ঘটনার ভোরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে অবাক হয়ে যান ধ্বংসযজ্ঞ দেখে। কারুর সরকারি হাসপাতালে আহতদের ভিড়ে হাহাকার শুরু হয়। মর্গের সামনে সারারাত ভেসে আসে শোকাহত পরিবারের কান্না। দুর্ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে শোকবার্তা দেন বিজয়। তিনি লেখেন, ‘অসহনীয় ও বর্ণনাতীত বেদনায় ভেঙে পড়েছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও। আহতদের চিকিৎসা ও মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।