• ৭০ বছরের বাস, যে কোনও সময় কেড়ে নেবে মাথার ছাদটুকুও! আলোর উৎসবে ভয়ে-কুঁকড়ে দিন কাটাচ্ছেন ওঁরা
    আজকাল | ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছে চারপাশ। দেশ জুড়ে আলোর উৎসব। দীপাবলির রাতে তবু ওই এক জায়গায় যেন জমাট অন্ধকার এক টুকরো। কারও মুখে আনন্দ নেই। ঘরের চৌকাঠে সলতে দেওয়া প্রদীপ নেই। দেওয়ালে আলোর মালা নেই। সবকিছুর মাঝে থেকেও যেন বিচ্ছিন্ন। থাকার মধ্যে রয়েছে চিন্তা, ভয়। ভয়, মাথার ছাদটুকু হারানোর।

    ভোপালের প্রাণকেন্দ্রে মানস ভবন। ঠিক তার পিছনে অন্ধকার এক টুকরো। পলিটেকনিক এলাকার সরু গলিতে, যেখানে একসময় মাটির দেওয়ালে  আলো ঝুলত সারিসারি, আর দরজায় থাকত রকমারি রঙিন প্রদীপ, এখন সেখানে ঘন নীরবতা। সেখানে বাস, ২৭টি আদিবাসী পরিবারের।  ২০০ জনেরও বেশি মানুষ, যাঁরা দিনমজুর, সন্তান, স্ত্রী, মা-বাবা সকলে মিলে সেখানেই আতঙ্কে দিন পার করছেন। 

    জানা যায়, প্রায় সাত দশক আগের কথা। তখন ওই এলাকায় বসতি দূরের কথা, খানা-খন্দ আর সাপ-খোপ ছিল। ওই এলাকায় তখন আদিবাসী পরিবারগুলিকে থাকার অনুমত দেওয়া হয়েছিল। সাত দশকে পরিবার বেড়েছে, বেড়েছে সদস্য সংখ্যা। তার মাঝেই এসেছে নোটিস। সময়ের মধ্যে খালি করতে হবে জায়গা।

    ২৫শে আগস্ট সেখানকার জেলা প্রশাসন ওই বাড়িগুলি, ওই জমি মূলত খালি করার নোটিস দেয় বাসিন্দাদের। নোটিসে বলা হয় যে, তাঁদের বসতি সরকারি ও বনভূমিতে অবস্থিত এবং সাত দিনের মধ্যে তা খালি করতে হবে। বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল যে যদি তারা সরে না যান, তাহলে শীঘ্রই বুলডোজার আসবে।

    কিন্তু স্থানীয়রা এবং কর্মীরা এই পদক্ষেপকে অন্যায্য, নিষ্ঠুর বলেন। রুখে দাঁড়ান বাসিন্দারাও। তাঁদের দাবি, এই পরিবারগুলির মধ্যে অনেকেই তিন প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করছেন। বন অধিকার আইনের অধীনে, পুনর্বাসন ছাড়া তাদের আইনত উচ্ছেদ করা যাবে না বলে দাবি করেন।

    তবে রুখে, জেদে মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেও, বুকের ভিতরে অজানা ভয়। কখন আবার নোটিস আসে। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, 'আমাদের দীপাবলিতে অন্ধকার কেন? কেনই বা আমাদের আতঙ্ক নিয়ে বাঁচতে হবে?' সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের ক্ষোভ, রাগ, কষ্ট উজাড় করে দিয়েছেন। কারও কারও গলায় স্মৃতি চারণ। কেউ মনে করছেন, কত যুগ আগে ওই ঘরেই বিয়ে করে প্রবেশ করেছিলেন, ১০ বাই দশ-এর ঘরে কীভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন বছরের পর বছর। কেউ মনে করছেন, অন্যান্য বছরে ওই ছোট ঘরগুলিই কীভাবে রঙিন আলোয় আলোকিত হয়ে উঠত। এখন শুধু চিন্তা, ভয়। আতঙ্ক খুদেদের চোখে মুখেও। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা গিয়েছে, এক খুদে, হাতে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা কাতর আর্জি, যেন তাদের ঘরটুকু ভেঙে না ফেলা হয়। 

    ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট দীপক পান্ডে সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, 'এই মানুষগুলো দখলদারিত্ব করছে। দীপাবলির কারণে, তাঁদের এখনও স্থানান্তর করা হয়নি। শীঘ্রই তাঁদের স্থানান্তরিত করা হবে। পৌর কর্পোরেশন তাঁদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় নির্মিত আবাসনে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে।'  
  • Link to this news (আজকাল)