মহিলা চিকিৎসককে বারবার ধর্ষণ! গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘণ্টাখানেক ঘুরলেন অভিযুক্ত পুলিশ, তারপরেই যা হল
আজকাল | ২৬ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহিলা চিকিৎসক। হাতের তালুতে ভয়াবহ, মর্মান্তিক কাহিনি লিখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। পেনের কালি দিয়ে লিখে গিয়েছিলেন, পুলিশ ইনস্পেক্টরের নাম। নাম ছিল আরও এক যুবকের। ওই যুবক, পরিচয়ে মহিলা চিকিৎসকের ভাড়া বাড়ির মালিকের ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছেন আগেই। তার ঘণ্টাখানেক পর গ্রেপ্তার হলেন অভিযুক্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর গোপাল বাদানে। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শনিবার রাতেই গ্রেপ্তার কররা হয়েছে তাঁকে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই, কাজ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল অভিযুক্তকে।
মহারাষ্ট্রের ফলটনের উপ-জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার। উদ্ধার হয়েছে তাঁর দেহ। একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ওই মহিলা চিকিৎসকের বা হাতের তালুতে পাওয়া গিয়েছিল কিছুটা লেখা। তাতে তিনি লিখেছেন, পুলিশ ইনস্পেক্টর গোপাল বাদনেই তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী। শুধু এটুকুই নয়। হাতের তালুতেই তিনি লিখে গিয়েছেন, পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে তাঁর উপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন ওই ইনস্পেক্টর।
তাঁকে চারবার ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। হাতের তালুতে তিনি যা লিখে গিয়েছেন, তার কিছু অংশের বাংলা তরজমা করলে দাঁড়ায়, 'ও আমাকে চার বার ধর্ষণ করেছে। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ও আমাকে ধর্ষণ, মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করেছে।'
হাতের তালুতে মারাঠিতে শেষ বার্তা লেখা ছিল, সেখানেই তিনি দু'জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। অভিযোগ, এসআই পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক তরুণীকে চার বার ধর্ষণ করেছিলেন। এ ছাড়া, বাড়িওয়ালার পুত্র টানা পাঁচ মাস ধরে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে তাঁকে হেনস্থা করেছেন।
মৃত চিকিৎসকের পরিবারের দাবি, চাপ দিয়ে নানা অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হত তরুণীকে। এমনকী, লিখিয়ে নেওয়া হত ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্টও। মৃতার খুড়তুতো ভাইয়ের অভিযোগ, কোনও রকম শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াই ওই সমস্ত রিপোর্ট লিখতে বাধ্য করা হত তরুণীকে। হুমকিও দেওয়া হত। একাধিক বার ডিএসপি-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের চিঠি লিখেছিলেন তিনি, কিন্তু লাভ হয়নি।
এছাড়াও ভাইয়ের আরও অভিযোগ যে, তরুণী চিকিৎসক এই বছরের শুরুতে, জুন-জুলাই মাসে তিনজন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, সেখানে তিনি তিনজন পুলিশের নাম উল্লেখ ছিল। যার মধ্যে সেই পুলিশ সদস্যও ছিলেন যিনি তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগগুলি অস্বীকার করে, সাতারা পুলিশের একজন আধিকারিক বলেছেন যে, নির্যাতিতা চিকিৎসক সেই সময় কোনও একটা বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন, তবে তা "অন্য কোনও বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত" ছিল।
তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় মহারাষ্ট্রের বিরোধী দল কংগ্রেস ক্ষমতাসীন জোট সরকারকে আক্রমণ করেছে। মহিলাদের সুরক্ষায় সরকার "ব্যর্থ" বলে অভিযোগ তুলেছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র শচীন সাওয়ান্ত বলেছেন, "মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের নেতৃত্বাধীন সরকার মহিলাদের সুরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।"
উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মুখপাত্র সুষমা আন্ধারে দাবি করেছেন যে, মামলার তদন্তের জন্য একটি পৃথক বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠন করা উচিত। অন্যদিকে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন, নিন্দনীয় বলেও অভিহিত করেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠর শাস্তির দাবিতে তিনি মহারাষ্ট্র পুলিশের উপর ভরসা রেখেছেন বলেই জানিয়েছেন। তবে ঘটনায় সে রাজ্যের নারী নিরাপত্তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই চলছে রাজনৈতিক তরজাও।