আজকাল ওয়েবডেস্ক: মিলে গেছে আবহাওয়ার দপ্তরের পূর্বাভাস। মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশে আছড়ে পড়ল প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থা। অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম ও কাকিনাড়ার দক্ষিণে কলিঙ্গপত্তনমে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হয়েছে। সেই সময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ১১০কিমি/ঘণ্টা। ল্যান্ডফলের আগে থেকেই অন্ধ্রপ্রদেশের একাধিক উপকূলে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। বিকেল থেকে সন্ধ্যার মাঝেই ৯০ থেকে ১০০ কিমি বেগে ঝড় শুরু হয়েছিল। ঝড় ও প্রবল বৃষ্টির জেরে রীতিমতো তছনছ গোটা রাজ্য।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার দাপটে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গাছ উপড়ে পড়েছিল তাঁর বাড়িতে। সেখানেই চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। গোটা রাজ্যে আহত হয়েছেন আরও দু'জন। কোথাও উপড়ে পড়েছে গাছ, কোথাও আবার নেমেছে ধস। উত্তাল সমুদ্রের তীরেও ঘোর বিপত্তি। উঁচু উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত। পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশাতেও এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১৫ জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে।
ভারতের মৌসম ভবন আইএমডি জানিয়েছে, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থা ল্যান্ডফলের পরেই শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর অভিমুখ এবার ওড়িশার দিকে। ঘূর্ণিঝড় মান্থার দাপট কমলেও ভারী বৃষ্টির থেকে মিলবে না রেহাই। আজ অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তেলেঙ্গানায় অতি প্রবল বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি রয়েছে ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গেও। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টি, দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে গুজরাট, সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ, কঙ্কন ও গোয়া, মধ্য মহারাষ্ট্র, বিদর্ভ এলাকায়।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার ল্যান্ডফলের সময়েই ওড়িশার গজপতি জেলায় গতকাল ধস নামে। পাহাড়ি রাস্তায় ধসের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। দক্ষিণ ওড়িশার জেলাগুলিতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছয়। আজ অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্তুর জেলায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির জেরে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কারণে এই ঘোষণা করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি এনটিআর ও বাপাতলা জেলাতেও আজ সমস্ত স্কুল বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ওড়িশার গজপতি জেলায় স্কুল, কলেজ সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মান্থার কারণে বুধবারেও অন্ধ্রপ্রদেশের জেলায় জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির লাল, কমলা সতর্কতা জারি রয়েছে। প্রকাশম, নেল্লোর, ইল্লুরু, তিরুপতি, ইস্ট গোদাবরী, কৃষ্ণা, গুন্তুরে অতি প্রবল বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। রাতেই ঝড়ের দাপটে উপড়ে পড়া গাছ সরানোর কাছে উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে পুলিশও উদ্ধার কাজে সামিল হয়। ঝড়ের দাপটে একাধিক বাড়ি ও গাড়ির উপর গাছ উপড়ে পড়ায়, বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধসের জেরে ওড়িশাতেও বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসময়ের এই ভারী বৃষ্টির কারণে অন্ধ্রপ্রদেশের এক লক্ষ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
ভারতীয় রেলের তরফে গতকাল ঘোষণা করা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় মান্থার কারণে ১২০টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বহু ট্রেনের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবারেও বহু ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। পাশাপাশি গতকাল বাতিল ছিল একগুচ্ছ বিমান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জোরকদমে কাজ চালাচ্ছে জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একাধিক টিম।