বাংলাদেশি তকমায় দিল্লি ছাড়তে চাপ পুলিশের! বাড়ি ফিরেই মৃত্যু বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের
প্রতিদিন | ২৯ অক্টোবর ২০২৫
কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন একই পরিবারের তিন সদস্য। বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশি তকমা দিয়ে রাজধানী থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। প্রাণভয়ে কার্যত সেখান থেকে পালিয়ে মুর্শিদাবাদের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন স্বামী-স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র সন্তান! অভিযোগ, সর্বশান্ত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল সন্তোষ দাস নামে বছর ৫৫-এর ওই ব্যক্তির। দিল্লির ঘটনার পর সন্তোষ দাস আতঙ্কে থাকতেন বলে পরিবারের দাবি। এই অবস্থায় ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বহরমপুর পুরসভা। আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বহরমপুরের দয়ানগরের শিবনগর রোডের বাসিন্দা ওই পরিবার। প্রৌঢ় সন্তোষ দাস দিল্লিতে গত প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে রঙের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। বেশ কয়েক মাস ধরে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বাংলায় কথা বলার জন্য দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ওই পরিবারও দিল্লিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ।
সন্তোষ দাসের স্ত্রী পাতা দাস দিল্লিতে পরিচারিকার কাজ করতেন। তাঁর ছেলে মিঠুন দাস হাউসকিপিংয়ের কাজে যুক্ত ছিলেন। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে দিল্লির যমুনা বিহার এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন সন্তোষ। অভিযোগ, গত আড়াই মাস আগে সন্তোষ দাসকে স্থানীয় পুলিশ ভয় দেখায়। তাঁরা নাকি বাংলাদেশি! তাঁদের এলাকা ছাড়তে বলা হয় বলে অভিযোগ। সেই ভয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বহরমপুরের বাড়ি চলে আসেন সন্তোষ দাস। গত ১০ দিন আগে হঠাৎ করে বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মারা যান। স্ত্রী ও পুত্রের দাবি, বহরমপুরে ফিরে আসার পর থেকেই মুষড়ে থাকতেন তিনি। সংসার কীভাবে চলবে, সেই দুশ্চিন্তা করতেন। এরপরেই এই অঘটন।
স্ত্রী পাতা দাসের দাবি, “সব বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হয়েছে। সেরকম কাজ ছিল না বলেই দিল্লিতে ছিলাম সপরিবারে। স্বামী চলে যাওয়ায় সব কিছু শেষ হয়ে গেল। তবে বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পাশে দাঁড়িয়েছে।” জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির শ্রাদ্ধের কাজকর্মের জন্য পুরসভার তরফে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি বলছে তারা মুসলিম বিরোধী দল। অথচ বহরমপুরের সন্তোষ দাস-সহ তাঁর পরিবারের লোকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের। অবাঙালিদের দ্বারা ওই বাঙালি পরিবারটি অত্যাচারিত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। এর জবাব মানুষ দেবে।”