৩১৭ কোটি টাকার সাইবার জালিয়াতি কাণ্ডে শিল্পপতি পবন রুইয়ার নাম
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ নভেম্বর ২০২৫
রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত ৩১৭ কোটি টাকার সাইবার জালিয়াতি চক্রের তদন্তে নয়া মোড়। রাজ্য পুলিশের সাইবার উইংয়ের দাবি, এই বিপুল প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নাম জড়িয়েছে শিল্পপতি পবন রুইয়ার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বালিগঞ্জের বাড়ি, পার্ক সার্কাসের সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের অফিস ও পার্ক স্ট্রিটের আরেক কার্যালয়ে টানা তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। তিন জায়গা থেকেই উদ্ধার হয়েছে বিপুল ইলেকট্রনিক্স ও নথিপত্র।
সাইবার উইং সূত্রে জানা গিয়েছে, তল্লাশি অভিযানে মিলেছে ৬টি মোবাইল ফোন, ১টি ম্যাকবুক, ১০টি ল্যাপটপ, হার্ড ডিস্ক, সার্ভার, ৭টি ওয়াই-ফাই রাউটার, প্রচুর প্যান কার্ড, চেকবই, ব্যাংক নথি, ১২টি পেন ড্রাইভ এবং ১৪৮টি শেল কোম্পানি বা ভুয়া সংস্থার নথিপত্র। উদ্ধার হওয়া বহু সিমকার্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দুবাই সহ বিভিন্ন দেশের ইস্যু করা। গোয়েন্দাদের মতে, এই সিমকার্ডগুলিই বিদেশে যোগাযোগ ও টাকা পাচারের মূল সূত্র।
জানা গিয়েছে, গত বছরের এপ্রিলে নিউ টাউনের এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিক বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানান। ২০২৩ সালে তাঁকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ করা হয় এবং শেয়ারে লগ্নি করলে ‘বিপুল লাভ’ হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। জালিয়াতরা ভুয়ো মোবাইল অ্যাপ ও জাল ওয়েবসাইট পাঠিয়ে তাঁর আস্থা অর্জন করে। শুরুতে কিছু লভ্যাংশ ফেরত দিয়ে তাঁকে সম্পূর্ণভাবে ফাঁদে ফেলা হয়। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ওই ব্যাঙ্ককর্মী মোট ৯৩ লাখ টাকা লগ্নি করেন। পরে রাজ্য পুলিশের সাইবার উইং এই ঘটনার তদন্তভার নেয় এবং ১ নভেম্বর দুবাই থেকে লন্ডন যাওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্তে উঠে এসেছে, শুধু রাজ্য নয়, সারা দেশজুড়ে মোট ১৩৭৯টি অভিযোগের ভিত্তিতে একই চক্র হাতিয়েছে ৩১৭ কোটি টাকা। ১৪৮টি ভুয়া সংস্থার মাধ্যমে সেই টাকা পাচার করা হয়, যেগুলির অনেকগুলির ঠিকানা একই। ‘ভাড়ার অ্যাকাউন্টে’ টাকা পাঠিয়ে শেল কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল অর্থ তছরুপ করা হয়। এই ৩১৭ কোটির মধ্যে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
৫ নভেম্বর বারাকপুর কমিশনারেটের সাইবার থানায় নতুন অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর নতুন সূত্র মেলে। সেই সূত্র ব্যবহার করেই তদন্তকারীরা পবন রুইয়ার সংযোগ খুঁজে পান বলে পুলিশের দাবি। অভিযোগ, তাঁর সংস্থার মাধ্যমেই বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করা হয়।
সাইবার উইং জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া নথি ও ডিভাইস পাঠানো হয়েছে ফরেনসিক পরীক্ষায়। বিদেশি সিমকার্ড থেকে যোগাযোগের ইতিহাস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে আরও বড় চক্রের হদিশ মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।