• কুপিয়ে বস্তাবন্দি দেহ ফেলা হয় ডিভিসির খালে, তৃণমূলকর্মী খুনে যাবজ্জীবন ৮ সিপিএম ক্যাডারের
    ২৪ ঘন্টা | ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • বিধান সরকার: পনেরো বছর আগে হুগলির গুড়াপে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় ৮ সিপিআইএম কর্মীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করল চুঁচুড়া আদালত। গত ৬ নভেম্বর অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। হুগলির গুড়াপে তৃণমূল কর্মী ক্ষুদিরাম হেমব্রম খুন হন ২০১০ সালের ১৮ মার্চ। মঙ্গলবার চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মা অভিযুক্ত ৮ সিপিআইএম কর্মীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের সাজা শোনালেন।

    সাজাপ্রাপ্ত সিপিআইএম কর্মীরা হল তৎকালীন গুড়বাড়ি -১ পঞ্চায়েত প্রধান লালু হাঁসদা, রবি বাস্কে, লক্ষীরাম বাস্কে, সিদ্ধেশ্বর মালিক, সনাতন মালিক, গণেশ মালিক, লক্ষ্মীনারায়ণ সোরেন, নাড়ু টুডু। ঘটনায় অমর রুইদাস ও নেপাল মালিক নামে আরো দুই জন বাম কর্মী অভিযুক্ত ছিলেন, যারা বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন মারা যান।

    পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে,  ২০১০ সালের ১৮ ই মার্চ গুড়াপে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী ক্ষুদিরাম হেমব্রম। সেদিন মৃত ক্ষুদিরামের ছেলে সুনীল হেমব্রমের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল। মাঠে কাজ করে বন্ধু তপন রুইদাসের মেয়ের দেখাশোনার জন্য তার বাড়ি গিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম। তারপর আর বাড়ি ফেরেননি। পরদিন ১৯ তারিখ ডিভিসির ক্যানেল থেকে বস্তা বন্দী রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় ক্ষুদিরামের। 


    রাজনৈতিক কারণে তৃণমূল কর্মী ক্ষুদিরাম হেমব্রমকে কুপিয়ে খুন করে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। 

    ২০১০ সালের ১৯ শে মার্চ রাতে গুড়াপ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তপন রুই দাস। গুড়াপ থানার পুলিস তদন্তে নেমে ১০ সিপিআইএম কর্মীকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন, তথ্য প্রমান লোপাট, অস্ত্র হাতে অপরাধ সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়। চুঁচুড়া আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিস। ২৭ শে জুন ২০১৭ সালে চার্জ গঠন হয়। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১২ জন সাক্ষী দেন এই মামলায়। ঘটনায় ৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। বিচার পর্ব চলার সময় ২ অভিযুক্তের মৃত্যু হয়।

    আটজন জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। গত ৬ নভেম্বর তাদের দোষী সাব্যস্ত করেন চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সঞ্জয় কুমার শর্মা। আজ সাজা ঘোষণা হল। রায় ঘোষণার আগে বাদী -বিবাদী দু পক্ষের আইনজীবী র কাছে থেকে তাদের মতামত জানতে চায় আদালত। গত ৭ নভেম্বর সাজা ঘোষনার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। আদালত ৮জন অভিযুক্তদের পৃথক সেলে রাখার নির্দেশ দেয়। আজ হয় চূড়ান্ত রায়দান।

    এই মামলায় সরকারী আইনজীবী চণ্ডীচরণ ব্যানার্জী বলেন, আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালত তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের সাজা শুনিয়েছে। দশ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেছেন। অনাদায়ে এক বছর জেলের সাজা শুনিয়েছেন। নৃশংসভাবে ক্ষুদিরামকে খুন করা হয়েছিল।

    হুগলি জেলা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, প্রায় ১৫ বছর সময় লেগে গেল এই মামলার রায়দান হতে। তবে এর জন্য সরকারি আইনজীবী বা আদালত কেউই দায়ি নয়। মামলা চলাকালীন আসামি পালিয়ে গিয়েছিল তাকে ধরা এবং তথ্য প্রমাণ যোগাড় করে পুলিস চার্জশিট দিয়েছিল তারপর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই খুনে যে নৃশংসতা ছিল সেই কারণেই আদালত 8 জন দোষীকেই যাবজ্জীবন সবসময় কারাদণ্ড সাজা শুনিয়েছে।

    ক্ষুদিরামের স্ত্রী মালতি হেমব্রম বলেন,ফাঁসি হলে ভালো হত। আমার স্বামী চিরজীবনের মত চলে গেল। ছেলেমেয়েরা ছোটো ছিলো তাদের অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি।

    ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, ধনেখালিতে সিপিআইএম অনেক তৃণমূল কর্মীকে খুন করেছে। তাদের হার্মাদ বাহিনী অত্যাচার চালাতো। ২০১১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেই পরিবারগুলোকে বিচার দেওয়ার চেষ্টা করছি। ক্ষুদিরামকে তপন রুইদাসের বাড়িতে তার পরিবারের সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা সেই রক্ত বাড়ির মহিলাদের দিয়ে মুছতে বাধ্য করা হয়। মৃতদেহ লোপাট করে টেনে নিয়ে গিয়ে ডিভিসির খালে ফেলে দেয়।এবং এই ঘটনা যারা প্রত্যক্ষদর্শী তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়।আদালত তাদের সঠিক বিচার করেছ। আদালত থেকে বেরোনোর সময় দোষীরা জানিয়েছেন , তারা সিপিএম করেন বলে তাদের ফাঁসানো হয়েছে।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)