• ‘কলকাতা আমার কাছে পুণ্যভূমি’–স্বর সম্রাট ফেস্টিভালে যোগ দিতে এসে বললেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • প্রতিবছর স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করেন এই সময়ের অন্যতম সরোদশিল্পী পদ্মশ্রী পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার এবং তাঁর পরিবার। দায়িত্বে শ্রী রঞ্জনী ফাউন্ডেশন। তেজেন্দ্র নারায়ণের গুরু স্বরসম্রাট আলি আকবর খানের নামেই এই উৎসবের নাম। পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণের কথায়, “আলি আকবর খান কী বিরাট মাপের শিল্পী তা পরিমাপ করার ক্ষমতা আমার নেই!

    ওঁর নামে এই উৎসব, আমি চাইব রাগ সঙ্গীতের অনুষ্ঠান আরও বেশি বেশি করে প্রচার পাক। স্বর সম্রাট ফেস্টিভাল শুধুমাত্র দিকপাল শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে না, নবীন প্রতিভাদের সব সময় সুযোগ দিয়ে এসেছে এই উৎসব। আমার ধ্রুব বিশ্বাস এই নবীন শিল্পীরাই একদিন দিকপাল হয়ে উঠবে। এবারেও অনেক নবীন শিল্পী তাঁদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পাবেন”।

    তেজেনবাবু আরও জানান যে এই উৎসব বরাবরের জন্য মিস করবে উস্তাদ জাকির হোসেনকে। আগের বছর স্বর সম্রাটে ওঁর বাজানোর দিনই তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। এবারে স্বর সম্রাট ফেস্টিভাল উদ্বোধনে অন্যান্য বছরের মত এবারেও গুণী শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত এল সুব্রহ্মম, কবিতা কৃষ্ণমূর্তী, পণ্ডিত স্বপন চৌধুরী, মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, দেবাশিস কুমার এবং আরও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে জমজমাট ছিল এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

    এবারে তিনদিনের অনুষ্ঠানে শিল্পীদের চাঁদের হাট। উস্তাদ জাকির হুসেনকে শ্রদ্ধা জানালেন এখনকার মায়েস্ত্ররা,এঁরা হলেন উস্তাদ তফিক কুরেশি (ডিজেম্বে), পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ (তবলা), পণ্ডিত রাকেশ চৌরাশিয়া (বাঁশি) প্রমুখ। ছিলেন পণ্ডিত উল্লাস কশলকর (ভোকাল), সুরেশ তলওয়ালকরের (তবলা) সমবেত অনুষ্ঠান। বিশেষ আকর্ষণ সমন্বয় সরকার (সেতার) এবং অভিষেক লাহিড়ির (সরোদ) সেতার-সরোদ যুগলবন্দি, পণ্ডিত রাজেন্দ্র গঙ্গানি (কত্থক) এবং বিদুষী রমা বৈদ্যানাথন (ভারতনাট্যম) -এর কত্থক-ভারতনাট্যম যুগলবন্দি।

    তবে এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল কবিতা কৃষ্ণমূর্তি (কণ্ঠশিল্পী),সুজাতা মহাপাত্র (ওড়িশি নৃত্য), তন্ময় বোস (তবলা)-এর সমবেত পরিবেশনা। সম্ভবত ভারতে এমন পরিবেশনা এই প্রথম। কবিতা কৃষ্ণমূর্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বলেন, “আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পী নই, এখানে যাঁরা অনুষ্ঠান করতে এসেছেন তাঁরা সবাই দিকপাল।

    আমি নিজে একজন সাধারন মানুষ হতে পারি, কিন্তু এই সমস্ত অসাধারন শিল্পীদের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, এঁদের জন্যই আমার জীবনপথে চলাটা আসাধারণ হয়ে গেছে। কলকাতা আমার কাছে পুণ্যভূমির মত, আমি নিশ্চয়ই আগের জন্মে বাঙালি ছিলাম।”  শেষ দিনে এই অনুষ্ঠান  দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়। এছাড়াও শেষ দিনের চমক ছিল পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার (সরোদ) এবং পণ্ডিত স্বপন চৌধুরীর (তবলা) অনুষ্ঠান।

    তেজেন্দ্র নারায়ণ জানান,স্বপন চৌধুরীর জন্যই তিনি উস্তাদ আলি আকবর খানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটে। স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল বরাবর নতুনদের সুযোগ দিয়ে এসেছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণের ছাত্ররা এক মনোগ্রাহী অনুষ্ঠান পরিবেশন করলেন, পরিচালনায় ছিলেন তেজেন্দ্র নারায়ণের সুযোগ্য পুত্র ইন্দ্রায়ুধ মজুমদার। শীতের সন্ধ্যায় ধ্রুপদী সঙ্গীতের ওমে তিন দিন ধরে মজে ছিল গোটা কলকাতা।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)