• অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিস ঘিরে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ ক্ষুব্ধ প্রবীণ আশ্রমিকরা
    বর্তমান | ২১ এপ্রিল ২০২৩
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: সময়সীমা মাত্র ১৫ দিন। এর মধ্যেই জমি খালি করে দিতে হবে। তা না হলে বলপ্রয়োগ করে উচ্ছেদ করা হবে—বুধবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে এমনই নোটিস পাঠিয়েছিল বিশ্বভারতী। সেই খবর জানাজানি হতেই শোরগোল পড়েছে শান্তিনিকেতনে। বিশ্বভারতীর বিঘার পর বিঘা জমি বেদখল হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ, নোবেলজয়ীর ক্ষেত্রে মাত্র ১৩ শতক জমি নিয়ে এমন কড়া নোটিস! বিস্ময় প্রকাশ করে  বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষা মহলের একটা বড় অংশ। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আশ্রমিক থেকে প্রাক্তনীরাও। একযোগে সবার অভিযোগ, প্রচারের আলোয় ভেসে থাকতে মরিয়া উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেই কারণেই নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য নীরব অবস্থানে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

    অমর্ত্য সেনের এই জমির বিবাদ দীর্ঘদিনের। বিশ্বভারতীর দাবি, অমর্ত্য সেনের লিজ নেওয়া জমির পরিমাণ ১.৩৮ একর নয়। সেটা আসলে ১.২৫ একর। তিনি ১৩ শতক জমি জবরদখল করে রেখেছেন। এই মর্মে অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতন আসার পর থেকেই লাগাতার আইনি নোটিস পাঠিয়ে ওই অতিরিক্ত জমি হস্তান্তরের দাবি করে চলেছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীকালে নিজের নামে সেই জমি রেকর্ড করার পর বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন অমর্ত্যবাবু। কেন তাকে উচ্ছেদ করা হবে না, তা জানতে তাঁকে শোকজও করে বিশ্বভারতী। কর্তৃপক্ষের এহেন হুঁশিয়ারির পর জমি সংলগ্ন এলাকায় যাতে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি না হয়, তারজন্য ১৪৫ ধারা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান অমর্ত্যবাবুর আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী।  গত ১৯ এপ্রিল শুনানিতে ‘শেষ সুযোগ’ দেওয়া হয় অমর্ত্য সেনকে। ঠিক তার দু’দিন আগে কর্মসচিব অশোক মাহাতকে অমর্ত্য সেন চিঠিতে লেখেন—ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে লিজ দেওয়া জমির বিপরীতে কোনও দাবি থাকতে পারে না। ম্যাজিস্ট্রেটও উল্লেখ করেছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। কোনও হস্তক্ষেপ বা শান্তিভঙ্গের অনুমতি দেওয়া কাম্য নয়। তা সত্ত্বেও বিশ্বভারতী নোবেলজয়ীকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অনড়। পক্ষকালের মধ্যে জমি খালি না করলে বলপ্রয়োগ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ওই নোটিসে। 

    শান্তিনিকেতনের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে গোয়ালপাড়া, সর্বানন্দপুর, আদিত্যপুর, তালতোড় প্রভৃতি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে বিশ্বভারতীর। কিন্তু সেই জমিগুলি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষকে সেভাবে তৎপর হতে দেখা যায়নি। এছাড়া শ্রীনিকেতনের রথীন্দ্রপল্লির সুপ্তি রায়, পূর্বপল্লির তৃপ্তি বসু, কল্যাণ দাস প্রমুখ নিজেদের বাড়ি নিঃশর্তে বিশ্বভারতীকে দান করলেও সেগুলি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত হয়ে রয়েছে। পাশাপাশি পূর্বপল্লিতে তিন বিঘা প্লটের উপর বাড়ি রয়েছে। সেগুলির মালিকানা বেহাত হয়ে গেলেও জমি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষকে সেভাবে তৎপর হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। 

    এছাড়া, ২০২০ সালে ২৫ জুলাই নিজের ষষ্ঠ খোলা চিঠিতে জমি হাঙ্গরদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন উপাচার্য। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ভুবনডাঙা বাঁধ, পূর্বপল্লি, শ্রীপল্লি, দক্ষিণপল্লির অধিকাংশ জমি এখনও উদ্ধার করা যায়নি বলেই বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে। আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদ করার যে অপচেষ্টা উনি করছেন, তা নিন্দা করার কোনও ভাষা নেই। বিশ্বভারতীর সুনাম শেষ করতে উপাচার্য উঠে পড়ে লেগেছেন।’ যদিও অমর্ত্য সেনকে কড়া নোটিস পাঠানো নিয়ে তোলপাড় হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে।
  • Link to this news (বর্তমান)