• দমাতে পারেনি অ্যাসিড হানাও, উত্তীর্ণ সাহসিনী
    আনন্দবাজার | ২০ মে ২০২৩
  • জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে অ্যাসিড হানায় জখম হয়েছিল তার লেখার হাত। সকলে ভেবেছিলেন, তার আর পরীক্ষা দেওয়া হবে না। কিন্তু, দমে না গিয়ে মনের জোরে পরীক্ষা কেন্দ্রে বসেই ‘রাইটার’ বা লেখকের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল নলহাটি থানার একটি হাইস্কুলের ছাত্রী ওই নাবালিকা। ৪০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ওই নাবালিকা। নাবালিকার পরিবার-পরিজন বলছেন, নম্বরটা বড় নয়। সে যে ওই অবস্থায় পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে, এটাই কেউ ভাবতে পারেননি!

    অভিযোগ, মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগের দিন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় উপহার দেওয়ার নাম করে ওই নাবালিকার ডান হাতে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল তারই এক সহপাঠী। হাতে অ্যাসিড পড়তেই জ্বালায় ছটপট করতে থাকে ছাত্রীটি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দূরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরবাইকে অন্য এক জনের সঙ্গে ছাত্রীটির সহপাঠী পালিয়ে যায়। ওই নাবালিকা যাতে পরীক্ষায় ভাল ফল করতে না-পারে, তার জন্যই ওই ছেলেটি এই কাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। সে-কথা চিঠিতে লিখেও অভিযুক্ত ওই নাবালিকাকে দিয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘তোর উপর হামলা না করলে তুই অনেক দূর চলে যেতিস। সেটা যাতে না হয় তার জন্য তোর উপর হামলা করা হল’।

    নলহাটি ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেয়ের চিকিৎসা করানোর পরে নলহাটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নাবালিকার মা। ওই নাবালকও ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পুলিশ অভিযুক্তকে পরীক্ষার শেষ দিন গ্রেফতার করে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠায়।পুলিশ জানায়, ওই নাবালক বর্তমানে শর্তাধীন জামিনে আছে। আদালতের নির্দেশে নলহাটি থানা এলাকার মধ্যে আপাতত থাকতে পারবে না। সেটা কতদিন, তা পুলিশ সূত্রে জানা যায়নি।

    এ দিন মেয়ে পাশ করেছে শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘চোখের সামনে মেয়ের কষ্ট দেখে পরীক্ষায় বসতে মানা করেছিলাম। কিন্তু, ওর মনের জোর খুব। কিন্তু, যারা ওর খারাপ ফল চেয়ে ডান হাতে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার মতো অপরাধ করেছে, কষ্ট সহ্য করেও তাদেরকে জবাব দেওয়ার জন্যই মেয়ে পরীক্ষায় বসতে চেয়েছিল। ওর জেদ দেখে আমরাও আপত্তি করিনি।’’

    সেই মতো স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরে ওই নাবালিকা ‘রাইটার’ নিয়ে পরীক্ষা দেয়। নাবালিকা এ দিন জানায়, পরীক্ষা কেন্দ্রে বসলেও হাতের জ্বালা ভাব দূর তো হয়নি, উল্টে ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ খেয়ে ঘুম আসছিল। ওই অবস্থাতেই রাইটারদের প্রশ্নের উত্তর বলে দিতে হয়েছে। একটা পরীক্ষা দিয়ে এসে পরের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও শরীরে ব্যথার জন্য নিতে পারেনি। তার কথায়, ‘‘আশা করেছিলাম আরও ভাল ফল হবে। কিন্তু কী করব! মনের জোরে পরীক্ষা দিতে পেরে যেটুকু ফল হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট না হলেও পাশ করেছি এতেই আপাতত খুশি। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। দেখা যাক কী হয়।’’

    এখন অনেক সুস্থ ওই নাবালিকা। তবে, ডান হাতে এখনও টান ধরে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে কিছুদিন আগেই ভর্তি করতে হয়েছিল। তার মায়ের ক্ষোভ, ‘‘মেয়ের উপরে আসিড হামলার জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন লক্ষ টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। ওই টাকা পেলে মেয়ের ভাল ভাবে চিকিৎসা করানো যাবে।’’এ বিষয়ে জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সেক্রেটারি মহম্মদ রুকনুদ্দিন মোল্লা জানান, ওই নাবালিকা র ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নিয়ে সমস্যা ছিল। নতুন করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছে। তার জন্য কিছুটাদেরি হচ্ছে।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)