• এগরা বিস্ফোরণের জেরে পুলিশি ধরপাকড়! বড়সড় আন্দোলনে নামার পথে আতশবাজি ব্যবসায়ীরা ২০ মে ২০২৩ ১৩:২১
    আনন্দবাজার | ২০ মে ২০২৩
  • এগরা বিস্ফোরণ কাণ্ডের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আতশবাজি কারখানাগুলিতে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ-প্রশাসন। এই ঘটনার জেরে এ বার বড়সড় আন্দোলনের পথে নামতে চলেছেন আতশবাজি ব্যবসায়ীরা। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর নবান্নের তরফে ছয় দফা নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের। নবান্নের নির্দেশে বলা হয়, রাজ্যের সমস্ত বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। বৃহস্পতিবার নবান্নের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে অভিযান।

    আতশবাজি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই তাঁদের হয়রানি করা হচ্ছে। নিয়ম মেনে যে সমস্ত ছোট আতশবাজি ব্যবসায়ীরা সারা বছর কারখানা চালান, তাঁদের শ্রমিকদের যেমন ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তেমনি কারখানায় থাকা কাঁচামালও বাজেয়াপ্ত করছে পুলিশ। ফলে তাদের আর্থিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই ভাবে পুলিশি ধরপাকড় চলতে থাকলে তাঁরা আগামী দিনে কলকাতার রাজপথে বড়সড় আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বলে বাজি ব্যবসায়ীদের সূত্রে খবর।

    আতশবাজি ব্যবসায়ীদের দাবি, কোনও কারখানা থেকে বিস্ফোরক জাতীয় কোনও কাঁচামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আতশবাজি বানানোর সামগ্রী সোরা, গন্ধক এবং কাঠকয়লা রয়েছে কারখানায়। সেগুলি দিয়ে বিস্ফোরক বাজি তৈরি করা যায় না। কিন্তু পুলিশ শুক্রবার দিনভর উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন আতশবাজি কারখানায় হানা দিয়ে কারখানাগুলি বন্ধ করে দিয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, কারখানার মালিক এবং শ্রমিকদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।

    বৃহস্পতিবার নবান্নে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে চলা বাজি কারখানাগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। নিয়ম মেনে বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বাজেয়াপ্ত করা বাজি কী ভাবে নষ্ট করতে হবে তা-ও জানিয়েছে নবান্ন। তাতে বলা হয়েছে, বাজেয়াপ্ত বাজি আদালতের নির্দেশ মেনে নষ্ট করতে হবে। বিপুল পরিমাণ বাজি উদ্ধার হলে প্রয়োজনে অল্প অল্প করে তা নষ্ট করতে হবে। আর আতশবাজি মালিকদের অভিযোগ, তাঁদের বিনিয়োগের লক্ষ লক্ষ টাকা ধড়পাকড়ের নামে পুলিশ নষ্ট করে দিচ্ছে।

    শুক্রবার পুলিশের এমন অভিযান দেখে বাংলা আতশবাজি সমিতির সদস্যেরা দিনভর নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। আগামী কয়েক দিনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তারা বড়সড় আন্দোলনের পথে নামবেন বলে জানিয়েছেন। বাংলা আতশবাজি সমিতির তরফে বাবলা রায় বলেন, “পুলিশ কি কোথাও বিস্ফোরকজাত পদার্থ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রোজেন গ্লিসারিন বা পটাশিয়াম ক্লোরেড পেয়েছে? তেমনটা আদৌ খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, কারণ রাজ্যের আতশবাজি ব্যবসায়ীরা জানেন কোনটা আইনি আর কোনটা বেআইনি। তাই তাঁদের হেনস্থা করা বন্ধ হোক।” তিনি আরও বলেন, “আতশবাজি ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে রাজ্যের ৩১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান যুক্ত। পুলিশ-প্রশাসন যেন এই বিষয়টিও মাথায় রাখেন। এত মানুষ যদি পুলিশ-প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কর্মহীন হয়ে পড়েন তা হলে আমরা কলকাতার রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হব।”

    প্রসঙ্গত, বেআইনি বাজি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আলোচনায় কর্মসংস্থানের বিষয়টিও প্রশাসনের নজরে এসেছে। এই ধরনের বাজি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশ। রাতারাতি কারখানা বন্ধ হলে তাঁদের রোজগার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাই নবান্নের নির্দেশ, প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে কর্মীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা বেআইনি বাজি কারখানায় কাজ না করেও সুস্থ ভাবে জীবনধারণ করতে পারেন। কিন্তু প্রাথমিক পুলিশি ধরপাকড়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনও উদ্যোগ দেখতে পাননি আতশবাজি ব্যবসায়ীরা। তাই নিজেদের এবং শ্রমিকদের কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের।

    প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় একটি বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত হন আট জন। আহত হন বেশ কয়েক জন। বিস্ফোরণের পরেই এলাকা ছেড়ে পালান বেআইনি কারখানাটির মালিক ভানু বাগ। বৃহস্পতিবার ওড়িশা থেকে ভানু এবং তাঁর পুত্র বিশ্বজিৎকে গ্রেফতার করে সিআইডি। কিন্তু শুক্রবার তিনি মারা যান। সূত্রের খবর, কটকের একটি হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল ভানুকে। সেখান থেকেই ভানুকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বেআইনি বাজি কারখানার মালিকের শরীরের বেশির ভাগ অংশই পুড়ে গিয়েছিল বলেও জানা যায়। তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে ভানুর। আর সেই কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়েই এই নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)