• Animal Trial : ওষুধ পরীক্ষায় অ্যানিম্যাল ট্রায়াল নয়
    এই সময় | ০৪ জুলাই ২০২৩
  • অনির্বাণ ঘোষ গিনিপিগ। নিছক একটা প্রাণীর নাম নয়। এর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। শুধু গিনিপিগই নয়, তালিকায় রয়েছে ইঁদুর, খরগোশ, শিম্পাঞ্জির মতো আরও বেশ কিছু অবলা প্রাণী, যারা মানবসভ্যতার উন্নয়নের জাঁতাকলে প্রাণ দেয় বেঘোরে। এ বার সেই প্রথাকেই বন্ধ করতে সক্রিয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওষুধ সংক্রান্ত আইনে নতুন ওষুধের প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অ্যানিম্যাল ট্রায়াল যথাসম্ভব না-করার সুপারিশ করা হয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউএসএ এবং কানাডার পর পৃথিবীর পঞ্চম দেশ হিসেবে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ভারতে।

    সম্প্রতি নিউ ড্রাগ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রুল-২০২৩ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। যা আদতে ১৯৪০ সালের ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্টের অধীন ২০১৯-এর নিউ ড্রাগ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সংশোধনীর সাম্প্রতিকতম সংস্করণ। তাতেই প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে একান্ত উপায় না-থাকলে পশু-প্রাণীর দেহে ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। যুক্তি হলো, অযথা প্রাণীহত্যা বন্ধ করা। কেননা অ্যানিমাল ট্রায়ালে পাশ করার পরেও ৯০% ওষুধ পরে হিউম্যান মডেলে ব্যর্থ হয়। তাই অ্যানিম্যাল ট্রায়ালের বদলে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই বেসড টিস্যু কালচারে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

    * অ্যানিম্যাল মডেল কী # যে কোনও ওষুধের একেবারে প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল। তাতে মূলত দেখা হয় ওষুধের সুরক্ষার দিকটি। # অ্যানিম্যাল ট্রায়ালে পরখ করা হয়, ওষুধটি সহ্য করতে পারছে কি না প্রাণীর শরীর। না সইতে পারলে বাতিল করা হয় ওষুধটি। # প্রাণীর শরীরে ওষুধের কোনও মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অথবা বিষক্রিয়া থাকলে আর মানবশরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয় না। * কেন এড়ানোর যুক্তি # অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রাণীর শরীর ওষুধটি সহ্য করে নিতে পারলেও, মানবশরীর পরে আর সেটি সইতে পারছে না অথবা তার এফিকেসি বা কার্যকারিতা একেবারেই প্রত্যাশিত নয়।

    # এ দিকে যে প্রাণীর উপর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলল, তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। মৃত্যুও বিরল নয়। * পরিবর্তে কোন পন্থা # জোর দেওয়া হচ্ছে ল্যাবের মধ্যে টিস্যু ও সেল কালচার করে তার উপর ওষুধটি প্রয়োগ করায়। # এর জন্য গুরুত্ব দিতে বলা হচ্ছে অর্গ্যান-অন-চিপ পদ্ধতিকে। এই উন্নত প্রযুক্তি হলো ল্যাবের মধ্যে মানবশরীরের অঙ্গগুলির হুবহু মিনিয়েচার ভার্সন। # অর্গ্যান-অন-চিপের উপরে ওষুধ প্রয়োগ করলে যে ফল মেলে, তা অনেকটা মানবশরীরের কাছাকাছি। * তাতে লাভ কী # নয়া নিয়মকে স্বাগত জানিয়ে ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী বা চিরঞ্জীব বাগচিরা জানাচ্ছেন, এতে একদিকে যেমন অযথা প্রাণীর ক্ষতি হবে না, অন্যদিকে তেমনই আবার মানবশরীরের সঙ্গে বেশি মিল রয়েছে, এমন পদ্ধতিও অবলম্বন করা যায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে।

    # একটি বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ফেসিলিটেটর সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান স্নেহেন্দু কোনার বলছেন, 'আগে যখন উপায় ছিল না, তখন প্রাণীর শরীরেই ট্রায়াল করতে হতো। কিন্তু এখন যেহেতু প্রযুক্তির দৌলতে থ্রি-ডি অর্গ্যানয়েডস বা অর্গ্যান-অন-চিপের মতো সুবিধে আছে, তখন অযথা প্রাণীদের কষ্ট দিয়ে লাভ কী!'

    * সমস্যা কোথায় # ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক নয়া এই নিয়মকে স্বাগত জানিয়েও বলছেন, 'কিছু প্রাণীর শরীরে ট্রায়াল করা হয় এই জন্য যে, তাদের সঙ্গে মানুষের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার প্রভূত মিল রয়েছে। তাই অ্যানিম্যাল ট্রায়ালকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।'

    # কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য বলছেন, একান্ত উপায় যেখানে নেই, সেখানে অ্যানিম্যাল মডেলকে ছাড় দেওয়া হবে কেস-টু-কেস বিচার করে। # শান্তনু, শুভ্রজ্যোতিরা জানাচ্ছেন, টিকার কার্যকারিতা, অর্থাৎ শরীরে ইমিউনিটি জন্মানোর ক্ষমতা একটি জটিল ও সার্বিক শারীরবৃত্তীয় পরীক্ষা। কোনও ওষুধের লিথ্যাল ডোজ় (যে ডোজ়ে মৃত্যু হয়) হিসেব করার ক্ষেত্রেও সেই সার্বিক বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। এই সব ক্ষেত্রে অর্গ্যান-অন-চিপ পদ্ধতির এখনও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আশা, আগামী দিনে সেটাও দূর হয়ে যাবে।

    * পশুপ্রেমীরা কী বলছেন # পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালের (পেটা) পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সদস্য বিয়াস মুখোপাধ্যায় বলেন, 'প্রসাধনীর ট্রায়ালের ক্ষেত্রে আগেই ছিল এই নিয়ম। ওষুধের ক্ষেত্রেও যে নতুন নিয়ম একই রকম হলো। আমরা দারুণ খুশি। এখন দেখার, এই নিয়ম কতটা দৃঢ় ভাবে মেনে চলা হয়।'
  • Link to this news (এই সময়)