• আকাশবাণীতে FM রেনবোকে ফেরাতে সোচ্চার কলকাতা, মুখ খুললেন ভাস্বর থেকে মীর
    এই সময় | ০৪ জুলাই ২০২৩
  • আকাশবাণীর আকাশ থেকে মুছেছে রামধনু। কলকাতার প্রথম FM রেডিও স্টেশন এফএম রেনবো-এর পথ চলা থমকেছে দিন চারেক হল। ৩০ বছর ধরে একটানা শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করার পর আকাশবাণী কলকাতার রামধনুর যাত্রা শেষ। আচমকা এই খবরটি সামনে আসতেই শোরগোল নেটপাড়ায়। বেসরকারি রেডিও স্টেশনের পথেই সরকারি রেডিও স্টেশনটি বন্ধের খবরে মনখারাপ শ্রোতাদের। আকাশবাণীর অন্যতম সফল এই প্রোডাকশনকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু স্বতঃপ্রণোদিত ক্যাম্পেন। সেই ক্যাম্পেনের অংশ সেলেব থেকে রেডিও শ্রোতা সাধারণ মানুষ।

    ১০৭ নম্বর মেগাহার্টজ, ১৯৯৩ সাল থেকে গত ৩০ বছর ধরে এটাই ছিল FM রেনবোর-এর ঠিকানা। ৯০-এর দশকের নস্ট্যালজিয়া এই এফএম চ্যানেল। রেনবোর দেখানো পথেই এরও ১০ বছর বাদে কলকাতার বেতার তরঙ্গে একে একে আসে বেসরকারি FM চ্যানেলগুলি। ১ জুলাই থেকে নিজস্ব স্বকীয় পরিচয় হারিয়েছে পথিকৃৎ এফএম রেনবো। এখন আকাশবাণীর নিজস্ব চ্যানেল গীতাঞ্জলির সঙ্গে FM রেনবোর যৌথ সংসার। কমেছে প্রোগ্রাম। হারিয়েছে পরিচয়। এরই প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার একাধিক নেটিজেন।

    ফেসবুকের দেওয়ালে রেনবো-কে ফিরিয়ে আনার দাবিতে শেয়ার হচ্ছে একটি লেখা। যার বয়ান অনুযায়ী, শুধু শ্রোতাদের কথা ভেবেই নয়, FM রেনবো-এর শতাধিক উপস্থাপক এবং উপস্থাপিকা ও এই রেডিও চ্যানেলে কাজ করা মানুষদের কথা ভেবেও একে ফিরিয়ে আনা হোক। নেটিজেনদের দাবি, 'বেতার তরঙ্গে বাংলা গান, বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা, বাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে রেনবো-কে ফেরানো হোক।' স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ক্যাম্পেনে অংশ নিয়েছেন শতাধিক মানুষ। তাতে রেডিও-এর সঙ্গে যু্ক্ত মানুষদের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছেন সাধারণ শ্রোতাও। যুক্ত হয়েছে সাহিত্যিক ও প্রাক্তন আকাশবাণী আধিকারিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, আরজে রয়, অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, রত্নাবলী মিত্র, RJ কৃষ্ণকলি - এর মতো অগণিত বেতারপ্রেমী স্বনামধন্য মানুষ।

    এবিষয়ে অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় এই সময় ডিজিটাল-কে বলেন, 'খবরটা সত্যিই শকিং। মাসখানেক আগেও এফএম রেনবোতে গিয়েছিলাম একটি সাক্ষাৎকার দিতে। শুধু সেই কারণেই যে মন ভারাক্রান্ত তা নয়। আসলে একটা চ্যানেলের সঙ্গে অনেক মানুষের রুজি রোজগার জড়িয়ে থাকে। তাছাড়া এই চ্যানেল তো আকাশবাণীর একটা ঐতিহ্য। তাই এই ক্যাম্পেনের মাধ্যমে তাকে যদি ফিরিয়ে আনা যায়, সেই ভেবেই আমি যুক্ত হই। ইতিমধ্যেই এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। প্রচুর মানুষ শেয়ার করছেন।'

    মন ভারাক্রান্ত প্রাক্তন সকালম্যান ও প্রাক্তন বেতারকর্মী মীরেরও। এই সময় ডিজিটালকে বলেন, 'বেসরকারি এফএম চ্যানেলগুলো আসার আগে এই এফএম রেনবোই ছিল সবেধন নীলমণি। তার সঙ্গে আমাদের বড় হয়ে ওঠা, প্রচুর স্মৃতি। আকাশবাণীর ওই ভবনটা আমার কাছে মন্দিরের মতো। রেডিওটাকে যারা ভালোবাসেন, তাদের কাছে অবশ্যই এটা খুব হৃদয়বিদারক। যারা এতদিন এফএম রেনবো-তে কাজ করে এসেছেন তাদের সসম্মানে রেডিও-র অন্য কাজে পুর্নবাসন দেওয়া হলে, তাতে খানিকটা হয়তো মুখ রক্ষা হবে। শুধু উপস্থাপক-উপস্থাপিকা নয়, প্রচুর ভয়েস অ্যাক্টর, বাচিক শিল্পী ও অনেকে এর সঙ্গে জড়িত। তবুও এটা ভীষণ হতাশার। আসলে আমরা তো ফ্রিকোয়েন্সি হিসেবে রেডিও স্টেশনকে চিনি না, চিনি কণ্ঠস্বর হিসেবে। সেই কণ্ঠস্বর, বাচিক শিল্পীদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে যেন কাজে লাগানো হয়। তাদের যেন মনোবল না ভেঙে যায়। প্রাক্তন বেতারকর্মী হিসেবে আকাশবাণীর কাছে এটাই আমার আর্জি।'

    পাশাপাশি, FM রেনবো স্টেশনকে স্বমহিমায় ফেরাতে সোশ্যাল ক্যাম্পেন নিয়েও মুখ খোলেন মীর। প্রতিক্রিয়ায় প্রাক্তন রেডিও কর্মী হিসেবে নেটিজেনদের একটি আয়না দেখালেন প্রাক্তন আরজে। তাঁর গলায় শোনা গেল ক্ষোভ ও অভিমানের সুর। তিনি বলেন, 'যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আজ গলা ফাটাচ্ছেন, আমার সন্দেহ তাঁদের মধ্যে কজন আসলে রেডিওটা শুনতেন। তাঁরা যদি শুনতেন, তাহলে হয়ত এরকম ঐতিহ্যশালী রেডিও স্টেশন বন্ধ হত না। ব্যাপারটা অনেকটা ওই বাংলা সিনেমা কেন হলে চলছে না, সেরকম একটা বিষয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা অনেকেই গলা ফাটাই, কিন্তু আসলে যে কাজটা করলে আর এই পরিস্থিতিটা হত না, সেটা কেউ করি না। আমরা মনোযোগ দিয়ে দেখি না, মনোযোগ দিয়ে শুনিও না। যখন সেই ইন্ডাস্ট্রিটা ধুঁকতে শুরু করে, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে 'সোনালী দিন হারিয়ে গেল' বলে। ওই যে আকাশবাণীরও তো একটা লজিস্টিক কস্ট আছে। শ্রোতারা শুনলে, ব্যবসা হলে এটা কখনই বন্ধ হত না। যখন সব শেষ, তখন আর প্রতিবাদ করে কী হবে।'

    FM রেইবো প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একটি সমাপতনের কথাও উঠে আসে মীরের মুখে। ঠিক একবছর আগে ৩০ জুন, ২০২২ সালে রেডিও ছেড়েছিলেন তিনি। একবছর বাদে সেই একইদিনে, ৩০ জুন, ১০৭ মেগাহার্টজে শেষ সম্প্রচার ছিল FM রেইবো-র।
  • Link to this news (এই সময়)