• ম্যালেরিয়া বাড়ছে গত বছরের দ্বিগুণ গতিতে
    এই সময় | ০৪ জুলাই ২০২৩
  • শ্যামগোপাল রায় ডেঙ্গির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃহত্তর কলকাতায় বাড়ছে ম্যালেরিয়া। এবং দ্রুত গতিতে। বস্তুত, দ্বিগুণ গতি গত বছরের তুলনায়। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কলকাতায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৯১ জন। সেখানে ওই একই সময়ে এ বার শহরে ম্যালেরিয়ার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে ১০০৯ জনের। যা রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ। যা স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। যদিও স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর দাবি, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। আমাদের তরফে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। ম্যালেরিয়ার নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কাও প্রায় নেই। তবে যতদিন না মানুষ সচেতন হবেন, মশাবাহিত রোগের প্রকোপ একেবারে কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।'

    কেন বাড়ছে ম্যালেরিয়া? বিশেষজ্ঞরা এ জন্যে মূলত দু'টি কারণকে দায়ী করছেন। এক, আবহাওয়ার তারতম্য এবং দুই, আমজনতার একাংশের মধ্যে সচেতনতার অভাব। পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র বলেন, 'কলকাতায় গত কয়েক বছরে আবহাওয়ার অনেকটাই বদল ঘটেছে। তাপমাত্রা যেমন বেড়েছে, তেমনই ভারী বৃষ্টি কমেছে। ফলে, মশার লার্ভা ধুয়ে নষ্ট হচ্ছে না। উল্টে তাপমাত্রা বেশি থাকায় মশার বংশবিস্তারের ক্ষমতা বাড়ছে।' পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তার কথায়, 'বার বার বলার পরেও জল জমিয়ে রাখার প্রবণতাও ছাড়তে পারছেন না অনেকে। ১০টি বাড়িতে অভিযানে গেলে অন্তত ৪টি বাড়িতে জমা জলে লার্ভার সন্ধান মিলছে।'

    ম্যালেরিয়ার মশা মূলত কামড়ায় রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত। মশারি টাঙিয়ে শোওয়ার কথা বার বার বলা হলেও সেটাও অনেকে কানে তোলেন না বলে অভিযোগ। সেটাও রোগের বাড়বাড়ন্তের কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের বক্তব্য, 'ম্যালেরিয়ার বাহক স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশার লার্ভা নীচের তলার থেকেও উপরের তলায়, ছাদে বেশি জন্মায়। ক্লোরিন মিশ্রিত জলের তুলনায় বৃষ্টির জল, বেশি আলোর খোলা জায়গা বেশি পছন্দ করে। তাই শহরের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে বড় পরিসরে বৃষ্টির জল জমে বা জমার সম্ভাবনা থাকে, সেই সব জায়গায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত রাসায়নিকও স্প্রে করা হচ্ছে।'

    শহরে যে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তা স্পষ্ট কলকাতার প্যাথলজি ল্যাবগুলির পরিসংখ্যানেও। মৌলালি লাগোয়া নামী একটি প্যাথলজি ল্যাবের এক কর্তা জানাচ্ছেন, গত ১৫ দিনে রোজ যেখানে গড়ে দু'টি করে রক্তের নমুনা ডেঙ্গি পজিটিভ আসছিল, সেই জায়গায় গত কয়েক দিনে অন্তত পাঁচটি করে নমুনা ম্যালেরিয়া পজিটিভ আসছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, 'ডেঙ্গি আক্রান্ত তুলনায় কম। অন্য বারের তুলনায় এ বার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত বেশি। যাঁদের বড় অংশই আবার যাদবপুর, বেহালা, সন্তোষপুর, গড়িয়ার বাসিন্দা।'
  • Link to this news (এই সময়)