• কৌটো নেই, কিউআর কোডে মন বামেদের
    আনন্দবাজার | ০৪ জুলাই ২০২৩
  • কৌটো নিয়ে গিয়ে বাড়িতে, রাস্তায় চাঁদা তুলে নির্বাচনী তহবিল গড়ার সংস্কৃতি সিপিএমের দীর্ঘদিনের। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের মরসুমে কার্যত সে স‌ংস্কৃতি উধাও বলেই পর্যবেক্ষণ ওয়াকিবহাল মহলের। কৌটোর জায়গা নিয়েছে ‘কিউআর কোড’। রাজ্যের কয়েকটি জেলার পাশাপাশি, এ বার পশ্চিম বর্ধমানেও একই পথ নিয়েছে সিপিএম। দলের বক্তব্য, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির সাহায্যে নেওয়া হচ্ছে। তবে, ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ি-বাড়ি রসিদ দিয়ে তহবিল গড়ার যে কাজ চলছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সিপিএম। তবে সিপিএমের উদ্যোগকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।

    দলীয় তহবিল বা নির্বাচন তহবিল গড়ে তুলতে পাড়ায়-পাড়ায় সিপিএম কর্মীদের কৌটো হাতে সাহায্য চাইতে দেখা যেত। তবে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের আগে কৌটোর বদলে তারা চালু করেছে কিউআর কোড। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সেই কোডের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপে। এখন মোবাইলের মাধ্যমেই যে কেউ চাইলে সিপিএমকে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেন। কেন এমনটা? সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে নানা সুবিধা হচ্ছে। প্রথমত, দলীয় কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সময় বাঁচছে। সেই সময় কর্মীরা নির্বাচনী প্রচার বা অন্য কাজ করতে পারছেন। দ্বিতীয়ত, চাঁদা চাইতে গেলে অনেক জায়গায় বিরোধীদের বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ ওঠে। নতুন পদ্ধতিতে সে সব অশান্তি এড়ানো সম্ভব যাচ্ছে। তৃতীয়ত, অনেকেই আছেন যাঁরা বাম মনোভাবাপন্ন। কিন্তু প্রকাশ্যে আসতে চান না। এমনকি, কৌটো নিয়ে চাঁদা চাইতে গেলেও তাঁরা এড়িয়ে যান। অথচ, সেই তাঁরাই এখন চাইলে নিশ্চিন্তে চাঁদা দিতে পারবেন। বিদেশ থেকেও ইচ্ছুকেরা চাঁদা দিতে পারবেন।

    সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “প্রযুক্তির অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে নতুন এই পন্থা চালু করা হয়েছে। অনেকেই দলের সদস্য নন। সভা, মিছিলে আসেন না। কিন্তু মানসিক ভাবে আমাদের পাশে আছেন। তাঁরা এই কিউআর কোড ব্যবহার করে খুব সহজেই সহযোগিতা করতে পারবেন।” সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি ভিডিয়ো তৈরি করে তা শেয়ার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিয়োয় বলা হয়েছে, ‘কাছেই থাকুন বা দূরে, গ্রাম বাঁচানোর লড়াইয়ে মানসিক ও আর্থিক ভাবে আপনারা থাকুন আমাদের পাশে।’

    সিপিএমের এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেতা তথা দুর্গাপুরে পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসনে গ্রাম-বাংলার মানুষ যেভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, তা এখনও কেউ ভোলেননি। কৌটো নিয়ে চাঁদা তুলতে গেলে মানুষ দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেন। তাই কিউআর কোড। তা ছাড়া, এই দলই কম্পিউটারের বিরোধিতা করেছিল, মানুষ সেটাও ভোলেননি।” বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “মানুষ পাশে নেই, এটা বুঝেই হতাশা থেকে এ সব করছেন ওঁরা।” তবে সিপিএম নেতা পঙ্কজের তোপ, “নারদা, সারদা, শিক্ষা দুর্নীতি, কাটমানির টাকা, আম্বানি, আদানিদের টাকা আমাদের নেই। তাই মানুষই আমাদের ভরসা।”

  • Link to this news (আনন্দবাজার)