• বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া করেও ব্যর্থ বিজেপি তৃণমূলেই আস্থা সংখ্যালঘু এলাকার
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রাভঙ্গের পরিকল্পনা নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু যাদের রাস্তা পরিষ্কার করতে চেয়েছিল তারাও হোঁচট খেল। সংখ্যালঘু এলাকায় ‘গোপন বোঝাপাড়া’ থাকলেও ফল বেরনোর দিন দেখা গেল বিজেপির সেই চাল ধোপে টিঁকল না। ওই প্রতিটি বুথেই সংখ্যালঘু ভোট গিয়ে পড়েছে তৃণমূলের ঘরে। ফলে শেষ হাসি হাসলেন ঘাসফুল প্রার্থীরাই। বীরভূমের সংখ্যালঘু ভোট কোনদিকে গিয়েছে তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এমনই তথ্য পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে একাবারে হাতে গোনা কয়েকটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথে কংগ্রেস ভালো সংখ্যক ভোট কেটেছে বলে জানা গিয়েছে।

    মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রত্যেকের মুখেই শোনা গিয়েছে ‘রাম-বাম-শ্যাম’ জোটের কথা। রাম-বাম জোটের তত্ব জানা গিয়েছিল শেষ কয়েকটি ভোটে। এবার সেই তালিকায় ‘শ্যাম’ বলতে কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটে অলিখিত ভাবে তারা প্রত্যেকে নিচুতলায় চুক্তি করেছিল বলে শোনা গিয়েছে। বীরভূমের ক্ষেত্রেও তা দেখা গিয়েছে। ওয়াকিবহল মহলের মতে, বিজেপি জানে তাদের সংখ্যালঘু ভোট পাওয়া মুশকিল। তাই তারা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অধিকাংশ বুথে ‘ইচ্ছে করেই’ প্রার্থী দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়াও তাঁদের সংখ্যালঘু মুখ খুঁজে পাওয়াও কষ্টের। ফলে বিজেপির প্রার্থী না থাকায় সেই সব আসনে তৃণমূলের সঙ্গে কেবল লড়াই হয় বাম-কংগ্রেস জোটের। বিজেপির ধারণা ছিল, এই সংখ্যালঘু ভোট তাদের ঝুলিতে না এলেও যদি কংগ্রেস কিংবা বামে যায় তা যথেষ্ঠ ইঙ্গিতপূর্ণ হবে লোকসভার আগে। উল্টো দিকে দেখা যায়, জেলায় এমন বেশ কিছু আসন আছে, যেখানে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু ফলাফল? সংখ্যালঘু ভোটে ফাটল ধরানোর চাল কার্যসিদ্ধ হল না! জেলার সংখ্যালঘু মানুষজন ঢেলে ভোট দিলেন তৃণমূল প্রার্থীদের। যেমন, সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের ১৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি জেতে ৯টি ও তৃণমূল জেতে ৮টি। সেই ফলাফলের পর কংগ্রেস নেতা থেকে কর্মী, সমর্থকদের বিজেপির সঙ্গে একসঙ্গে আবির খেলায় মেতে উঠতে দেখা যায়। দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট ১, রামপুরহাট ২, হাসন বিধানসভা সহ একাধিক এলাকায় ওই বিরোধী ‘জুটি’র লড়াই কাজে এল না। ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতগুলি বাদ দিয়ে মোট ১৬৭টি পঞ্চায়েতের ১৪০টি পঞ্চায়েতই দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। যদিও বিরোধীরা এই ‘গোপন বোঝাপাড়া’ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নয়। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি দীপক দাস বলেন, বগঢুইয়ের মতো জায়গাতেও আমরা প্রার্থী দিয়েছি। এমনিতে তৃণমূল এনআরসি সহ অনেক ইস্যুতে সংখ্যালঘুদের মনে আমাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা ঢুকিয়ে রেখেছে। তাই সংখ্যালঘু ভোট আমরা পাইনি। তবে সিপিএম, কংগ্রেস যে বিরাট পেয়েছে তাও নয়। আসলে তৃণমূল বাদে কোনও ভোটই কেউ পাবে না। ছাপ্পা, রিগিং যারা করেছে তারাই তো কেবল ভোট পাবে। আমরা জেলাতে ২৩ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছি বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, আমরা কেবল কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করেছি। সেই কারণে মুরারই, মহম্মদবাজার, নলহাটিতে ভালো ফল হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি ভেবেছিল সংখ্যালঘু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আপামর জেলাবাসী জানেন উন্নয়নের নিরিখে এই জেলাকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকরা। লোকসভাতেও মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
  • Link to this news (বর্তমান)