• Manipur Incident : মণিপুরে বিরোধীরা, পদ্মের কটাক্ষে বঙ্গ
    এই সময় | ৩০ জুলাই ২০২৩
  • এই সময়, নয়াদিল্লি ও কলকাতা : মণিপুর ইস্যুতে সংসদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে বিরোধীরা যে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে, তার উপর আলোচনা কবে হবে--তা চূড়ান্ত হতে পারে আগামী সপ্তাহেই। আলোচনা যেদিনই হোক না-কেন, অনাস্থা গৃহীত হওয়ায় সংসদে মুখ খুলতেই হবে নরেন্দ্র মোদীকে। স্বাভাবিকভাবেই তাতে উঠে আসবে মণিপুর প্রসঙ্গ।

    তার আগে এই ইস্যুতে নিজেদের অভিযোগ আরও পোক্ত করতে পূর্ব ঘোষণা মতো বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ২১ জন প্রতিনিধি দু’দিনের সফরে শনিবার পৌঁছালেন মণিপুরে। সেই দলে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর সঙ্গে রয়েছেন তৃণমূলের সুস্মিতা দেব, ডিএমকে-র কানিমোঝি, জেডিইউ-এর রাজীবরঞ্জন (লালন) সিংয়ের মতো বিরোধী সাংসদরা।

    সেখানে সংঘর্ষরত কুকি ও মেইতেই--দুই জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সমাজকর্মী, প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। সে রাজ্যের কয়েকটি ত্রাণ শিবিরে গিয়ে সেখানকার হালহকিকতও খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। সব মিলিয়ে দু’দিনের সফরে তাঁরা যে সব তথ্য পাচ্ছেন, সেগুলি তুলে ধরে সংসদে দেওয়া সরকারি রিপোর্ট এবং কেন্দ্রের বক্তব্যকে খণ্ডন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অধীররা।

    গত সপ্তাহ দেড়েক সংসদের বাদল অধিবেশন চলাকালীন মণিপুর ইস্যুতেই বিরোধীদের প্রবল বিক্ষোভে বারবার মুলতুবি করতে হয়েছে দুই কক্ষের অধিবেশন। রাজস্থান, বাংলায় নারী নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে বিরোধীদের পালটা আক্রমণের রাস্তাতেও হেঁটেছেন বিজেপি সাংসদরা। তা বড় একটা কাজে আসেনি। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংয়ের মতো কেন্দ্রের সিনিয়র মন্ত্রীরা বারবার আলোচনার আশ্বাস দিলেও বিরোধীরা একটাই দাবিতে অনড়--প্রধানমন্ত্রীকে এনিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে এবং পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করতে হবে মণিপুর নিয়ে।

    সংসদের অধিবেশন বারবার মুলতুবি করে দিতে হওয়ায় বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা বলার চেষ্টা করেছেন যে বিরোধীরাই আলোচনা চাইছে না। তা যে সঠিক নয়, তাঁরা যে আন্তরিক ভাবেই মণিপুর সমস্যার সমাধান চান, সেটা স্পষ্ট করে দিতে সব বিরোধী দলের প্রতিনিধি মিলে সরেজমিনে সেখানকার অবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়েছেন। যদিও এদিনই কেন্দ্রের মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বাংলায় এসে বিরোধী প্রতিনিধিদের এই সফরকে কটাক্ষ করেছেন।

    তাঁর কথায়, 'কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী সাংসদদের নিয়ে মণিপুরে গিয়েছেন। ‘ইন্ডিয়া’র এই প্রতিনিধিরা পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতন দেখতে কবে আসবেন? রাজস্থানে অশোক গেহলটের বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে নারী নির্যাতন হয়েছে। যোধপুরে তিনজন মহিলাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধি দল কবে রাজস্থানে যাবে?'

    এরপর পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ টেনে অনুরাগের আক্রমণ, 'পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নাকের ডগায় কী হচ্ছে, তা দেখতে আসুন । বাংলার মানুষ আপনাদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।' তাঁকে পালটা নিশানা করে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেছেন, 'অনুরাগ ঠাকুর কেন বাংলায় এসেছেন? মণিপুর যাবেন না কেন? মণিপুরে গিয়ে কেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করবেন না? লোকসভা-রাজ্যসভা এখন খোলা। তারপরেও ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিচ্ছেন না। ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স দু’দিন থাকবে মণিপুরে। আপনারা কিন্তু পৌঁছালেন না। এর জবাব আপনাদের দিতে হবে।'

    এদিন বিকেলে মণিপুরের ইম্ফলে পৌঁছে বিরোধী প্রতিনিধি দল চপারে উড়ে যান চূড়াচাঁদপুরে, যেখানে গত তিন মাসে একাধিক অশান্তি ও হিংসার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে কুকি জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বের পাশাপাশি মহিলা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। কয়েকটি ত্রাণ শিবিরেও যান।

    ঘটনাচক্রে এদিন চূড়াচাঁদপুরে গিয়েছিলেন মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকেও । সেখানকার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের তরফ থেকে তিনি সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের। ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করে বেরিয়ে অধীর সাংবাদিকদের বলেন, 'হিংসার ঘটনায় কেন্দ্র সিবিআই তদন্তের কথা বলছে। আমাদের প্রশ্ন, কেন্দ্র এখনও কেন ঘুমিয়ে আছে?'

    সুস্মিতার কথায়, 'প্রত্যেকের কথা শোনা প্রয়োজন। সেজন্য আমরা কুকি ও মেইতেই উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলব।' গৌরব গগৈ জানিয়ে দিয়েছেন, আক্রান্ত-আতঙ্কিত মণিপুরবাসীর কথা তাঁরা সংসদে তুলে ধরবেন।
  • Link to this news (এই সময়)