• ‘সাইরেনের শব্দ শুনে দৌড়ই’
    আনন্দবাজার | ০৮ অক্টোবর ২০২৩
  • শনিবার সকাল ৭টা তখন। সাইরেনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। দেড় বছর হল ইজ়রায়েলে রয়েছি। সাইরেনের শব্দ আগেও শুনেছি। প্রথমটা গা করিনি। তার পর ফের সাইরেন বেজে উঠল। এ বারে কেমন ভয় লাগল। তার পর ফের...। পরে শুনলাম, একটু আগে প্যালেস্তাইন আচমকাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। অনেকে মারা গিয়েছেন। ইজ়রায়েলও পাল্টা আক্রমণ করেছে। তাতে দেড়শোরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

    সাইরেনের শব্দ শুনে ছুট লাগিয়েছিলাম শেল্টার রুমের দিকে। তেল আভিভ শহরটার বিভিন্ন জায়গায় শেল্টার রুম তৈরি করা আছে। ইজ়রায়েল ও প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ চলতেই থাকে। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই ব্যবস্থা করা রয়েছে শহর জুড়ে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থাকি। এখানে প্রতিটি তলায় একটি করে নিরাপদ কুঠুরি আছে। বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে এই ধরনের ঘরগুলোয়। কাছাকাছি রকেট এসে পড়লেও বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই প্রশাসন থেকে বলা রয়েছে, বিপদ বুঝলে শেল্টার রুমে চলে যেতে হবে। আমিও তাই দৌড় লাগাই। যেতে যেতেই ফের প্রকাণ্ড বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেছিলাম। কী জানি, রকেট নাকি! এখানে ছুটি চলছিল। সুখোত। এটি একটি ধর্মীয় পার্বণ। এ দিনই ছুটির শেষ দিন ছিল। এমনিও শনিবার, সপ্তাহান্ত। তাই দোকানপাট সব বন্ধ আছে এখানে। এমনকি পরিবহণও বন্ধ। সীমিত কিছু পরিষেবা চালু রয়েছে। রাস্তাঘাটে লোকজনও খুব কম। রবিবার থেকে বোঝা যাবে পরিস্থিতি ঠিক কোন দিকে এগোচ্ছে।

    গত দেড় বছরে ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধের নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, দু’দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে সব কিছু। এ বারে অবশ্য অন্য রকম ঠেকছে। ভারতীয় দূতাবাস থেকে ইমেল করা হয়েছে আমাদের। জানানো হয়েছে, প্রয়োজন হলে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। শুনছি, প্যালেস্তাইনি সন্ত্রাসবাদীরা নাকি শহরে ছড়িয়ে গিয়েছে।

    আমি যে জায়গাটায় থাকি, সেটা উত্তর তেল আভিভ। দক্ষিণ তেল আভিভের অবস্থা বেশি খারাপ। গাজ়া সীমান্ত থেকে ওই দিকটা খুব কাছে। বেরশিবা, রেকোভো, এই সব অঞ্চল খুব বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। বেরশিবায় রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। ওখানেও অনেক ভারতীয় পড়ুয়া থাকেন। চিন্তা হচ্ছে। যোগাযোগ রাখছি চেনাজানা সকলের সঙ্গে।

    এখানে সাধারণ মানুষ (ইজ়রায়েলি ও বিদেশি, সকলেই) দু’টি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। ‘রেড অ্যালার্ট’ ও ‘হোম ফ্রন্ট কম্যান্ড’। এই দু’টো অ্যাপে যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে খবর রাখেন সকলে। আমিও ওটায় চোখ রাখছি। দেখি কী হয়।

    (লেখক তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র)

  • Link to this news (আনন্দবাজার)