• লক্ষ্মীবালার স্বপ্নে এসে পুজোর আদেশ মায়ের
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়, বজবজ: স্বামী সুধীর পাত্র ধর্মপ্রাণ হলেও দুর্গাপুজো করতে চাইছিলেন না। পুজোর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তা জোগাড় করার সামর্থ্য তাঁর ছিল না। অথচ স্ত্রী লক্ষ্মীবালাদেবী দুর্গার পুজো শুরুর জন্য অনুরোধ চালিয়েই যাচ্ছিলেন। টাকাপয়সার বিষয়টি সামনে এনে সুধীরবাবু সম্মতি দিতেন না। তিনি চেয়েছিলেন, বাড়িতে চণ্ডী পুজো যেভাবে হচ্ছে সেটাই হোক। স্ত্রী বায়না ধরলে সুধীরবাবু বলতেন, তুমি চণ্ডীপুজো করে যাও। তাতেই মঙ্গল হবে। কিন্তু লক্ষ্মীবালা নাছোড়। এরই মধ্যে দুর্গা একদিন তাঁর স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন, আমার পুজোর আয়োজন কর। তোর কাছে আমি থাকতে চাই।’ এই স্বপ্নের কথা স্বামীকে বললেন লক্ষ্মীবালা। এবং দুর্গাপুজোর অনুমতি না দিলে নিরন্ন থাকার কথাও ঘোষণা করলেন। বিপাকে পড়লেন সুধীরবাবু। তাঁর পরিবারে ছেলেমেয়ে ও অন্যান্য সদস্য মিলিয়ে মানুষের সংখ্যা কম নয়। সংসারের দায়িত্ব লক্ষ্ণীবালার কাঁধে। তিনি উপোস করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এই আশঙ্কায় শত অসুবিধা সত্ত্বেও সুধীরবাবু সম্মতি দিলেন। আর লক্ষ্ণীবালার হাত ধরে মা দুর্গা এলেন বজবজের চকেতবাটি রায়পাড়ার পাত্রবাড়িতে। শুরু হল পুজো। লক্ষ্মীবালার বয়স এখন ৯০ বছর। তাঁর বড় পুত্র নিমাইচাঁদ পাত্র কেএমডিএর অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। তাঁর এক ভাই বুড়ুল কলেজে চাকরি করেন। নিমাইবাবুর কথায়, ‘আমরা ছ’ভাই। মা সকলের প্রণম্য। এবার একটু জ্বর হয়ে কাহিল। গতবছর পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে থেকে পুজোর নজরদারি করেছেন। এবার সেটা পারছেন না বলে একটু মনমরা।’ 

    তিনি জানান, প্রথম দিকে মাটির প্রতিমা হতো। ৩৫ বছর আগে সিমেন্ট দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করা হয়। সেই থেকে মা এই রূপে রয়েছেন। বাড়িতে নিত্যপুজো পান। দুর্গাপুজোর ক’দিন বাইরে মণ্ডপ তৈরি করে সেখানে মাকে বসানো হয়। এখন মূর্তিতে রং করা হচ্ছে। পরিবারের মহিলা ও পুরুষরা পুজোর দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। সবাই মনের আনন্দে কাজ করেন এ ক’দিন। আত্মীয়রা আসেন। পুজোর সময় অতিথি সেবার কোনও ব্যবস্থা থাকে না। লক্ষ্ণীপুজোর সময় গ্রামের মানুষদের ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হয়। বিসর্জন নেই। নিয়মরক্ষার জন্য মায়ের সাময়ে যে ঘট স্থাপন হয় তা গঙ্গায় দিয়ে আসা হয়। 
  • Link to this news (বর্তমান)