• ৩০০ বল কিপিং করেই ১২১ বল ব্যাটিং, এক পায়ে পাকিস্তানকে জেতালেন রিজ়ওয়ান
    আনন্দবাজার | ১১ অক্টোবর ২০২৩
  • শ্রীলঙ্কার
    দুই শতরানের জবাব জোড়া শতরানেই দিল পাকিস্তান। তাতেই ৩৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে
    জয় ছিনিয়ে নিলেন বাবর আজ়মেরা। পেশিতে টান ধরায় কার্যত এক পায়ে ব্যাট করে পাকিস্তানকে জেতালেন মহম্মদ রিজ়ওয়ান।
    চাপের মুখে খারাপ ফিল্ডিংয়ের মাশুল দিয়ে হারতে হল দাসুন শনাকার দলকে। শ্রীলঙ্কার ৯
    উইকেটে ৩৪৪ রানের জবাবে পাকিস্তান করল ৪৮.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৪৫ রান। এই প্রথম বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচে চার জন ব্যাটার শতরান করলেন। এর আগে কোনও দল বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে জয় পায়নি কোনও দল। সেই হিসাবে নতুন নজির গড়ল পাকিস্তান। এর আগের রেকর্ডটি ছিল আয়ারল্যান্ডের। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩২৯ রান তাড়া করে জিতেছিল আইরিশেরা।

    টস জিতে প্রথমে
    ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক। শনাকাকে হতাশ করেননি দলের
    ব্যাটারেরা। হায়দরাবাদের ২২ গজে পাকিস্তানের সামনে জয়ের জন্য ৩৪৫ রানের লক্ষ্য
    রাখে শ্রীলঙ্কা। দ্বীপ রাষ্ট্রের দুই ব্যাটার শতরান করলেন। ওপেনার কুশল পেরেরা
    (শূন্য) ব্যর্থ হলেও প্রভাব পড়ল না শ্রীলঙ্কার ইনিংসে। অন্য ওপেনার পাথুম নিশঙ্কা
    করেন ৬১ বলে ৫১ রান। ৭টি চার এবং ১টি ছয় মারেন তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের মূল
    কান্ডারি তিন নম্বরে নামা কুশল মেন্ডিস এবং চার নম্বরে নামা সাদিরা সমরবিক্রম।
    দু’জনেই শতরান করলেন তাঁদের তৃতীয় উইকেটের জুটিতে উঠল ১১১ রান। মেন্ডিস করলেন ৭৭
    বলে ১২২ রান। মারলেন ১৪টি চার এবং ৬টি ছয়। সমরবিক্রমের ব্যাট থেকে এল ৮৯ বলে ১০৮
    রানের ইনিংস। ১১টি চার এবং ২টি ছয় দিয়ে সাজালেন নিজের ইনিংসটি। ধনঞ্জয় ডিসিলভা
    করলেন ২৫। শ্রীলঙ্কার আরও কোনও ব্যাটার বলার মতো রান করতে না পারলেও লড়াই করার মতো
    রান তুলতে অসুবিধা হয়নি। মেন্ডিস সাজঘরে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে
    নিয়ে যেতে হয়। ফলে তিনি উইকেট রক্ষা করতে পারেননি। সরমবিক্রমকে সেই দায়িত্ব পালন
    করতে হয়। শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয় ৯ উইকেটে ৩৪৪ রানে।

    হায়দরাবাদের
    ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে পাকিস্তানের বোলারেরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তার মধ্যেই
    ৭১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নজর কাড়লেন হাসান আলি। ৬৪ রানে ২ উইকেট হ্যারিস রউফের। ১টি
    করে উইকেট পেয়েছেন শাহিন আফ্রিদি, মহম্মদ নওয়াজ় এবং শাদাব খান।

    জবাবে শুরুটা
    ভাল হয়নি পাকিস্তানের। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও ব্যর্থ হলেন ওপেনার ইমাম উল হক (১২)
    এবং অধিনায়ক বাবর (১০)। পাকিস্তানের হয়ে জবাব দিল আর এক ওপেনার আবদুল্লা শফিক এবং রিজ়ওয়ানের
    ব্যাট। এ দিন বিশ্বকাপে অভিষেক হল আবদুল্লার। সেই ম্যাচেই পাকিস্তান ৩৭ রানে ২
    উইকেট হারানোয় চাপের মুখে পড়তে হয়। সেই চাপ সামলে তরুণ ব্যাটার এক দিনের ক্রিকেটে
    প্রথম শতরান তুলে নিলেন। মাথা ঠান্ডা রেখে ১০৩ বলে ১১৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেললেন।
    মারলেন ১০টি চার এবং ৩টি ছক্কা। শুধু তাই নয়, তৃতীয় উইকেটে রিজ়ওয়ানের সঙ্গে ১৭৬
    রানের জুটি তৈরি করে দলের জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি করে দিলেন। অভিজ্ঞ রিজ়ওয়ান শেষ
    পর্যন্ত ২২ গজে থেকে দলের জয় এনে দিলেন। মেন্ডিসের মতো তাঁরও ব্যাট করার সময় পেশিতে
    টান ধরে এ দিন। যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখা যায় তাঁকে। সেই কষ্ট উপেক্ষা করেই লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন তিনি। দলে জয় এনে
    দিয়ে মাঠ ছাড়লেন রিজ়ওয়ান। কার্যত এক পায়ে খেলে তিনি শেষ পর্যন্ত করলেন অপরাজিত ১৩১ রান। খেললেন ১২১ বল। মারলেন ৮টি চার এবং ৩টি ছয়। পাকিস্তানের দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে বিশ্বকাপে শতরান করার নজিরও গড়লেন। এর আগে এই নজির ছিল শুধু সরফারাজ আহমেদের। ম্যাচের সেরাও নির্বাচিত হয়েছেন রিজ়ওয়ান।

    সাউদ শাকিলের
    ৩১ রানের ছোট ইনিংসও পাকিস্তানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। শেষ দিকে
    রিজ়ওয়ানকে সঙ্গ দিলেন ইফতিকার আহমেদ। তিনি অপরাজিত থাকলেন ১০ বলে ২২ রান করে। শেষ দিকে পাক ব্যাটারদের আগ্রাসনের সামনে চাপে পড়ে যান শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারেরা। একাধিক সহজ ক্যাচ ধরতে পারলেন না তাঁরা। শনাকার দলের বোলারেরাও লাইন, লেংথ ঠিক রাখতে পারলেন না।

    শ্রীলঙ্কার কোনও বোলারই এ দিন পাক ব্যাটারদের সমস্যা ফেলতে পারেননি। দিলশান মধুশঙ্কা ৬০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মাহিশ থিকশানা এবং মাথিশা পাতিরানা।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)