৫০ হাজার টাকা না দেওয়ায় ডাইনি অপবাদে ২ বছর ধরে একঘরে পরিবার! চরম দুর্ভোগে কাটছে দিন...
২৪ ঘন্টা | ০১ জানুয়ারি ২০২৪
চম্পক দত্ত: ডাইনি অপবাদে ২ বছর ধরে একঘরে পরিবার। সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছে তাঁদেরকে। ৫০ হাজার টাকা না দিলে সমস্যার সমাধান করা হবে না বলে জানিয়েও দিয়েছেন গ্রামের মোড়লরা। সমস্যার সমাধানের কথা পুলিস থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা ২ নম্বর ব্লকের নীলগঞ্জ গ্রামের।জানা গিয়েছে, ২ বছর আগে গ্রামের এক নাবালক ও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় শারীরিক অসুস্থতার কারণে। তারপর থেকেই গ্রামের বেশ কিছু মানুষজন ওই গ্রামেরই এক আদিবাসী মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দেয়। তারপর থেকেই ওই মহিলাকে বিভিন্নভাবে অপবাদ দিতে থাকে আদিবাসী সমাজের মানুষজনেরা। এমনকি ওই গ্রামের বেশকিছু মোড়ল নিদান দেয় যে, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। তারপরে সমস্যার সমাধান নিয়ে মীমাংসায় বসবেন তারা। কিন্তু ৫০ হাজার টাকা দিতে না পারার কারণে সমস্যার সমাধানও হয়নি। আর সেই থেকে প্রায় ২ বছর ধরে সামাজিকভাবে বয়কট হয়ে রয়েছে আদিবাসী ওই পরিবার।মাঝেমধ্যেই চলে মানসিক অত্যাচার। বাড়ি ভাঙচুরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই পরিবারের। গোটা ঘটনায় অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। স্বামী অসুস্থ। তাঁকে রেখে আসতে হয়েছে আত্মীয়ের বাড়িতে। ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া করে। গ্রামের এই পরিস্থিতির জন্য অধিকাংশ দিন তারাও আত্মীয়ের বাড়িতে থাকে। এই নিয়ে সমস্যা সমাধানে পুলিস থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনকেও বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। এই সবের পিছনে ওই গ্রামের মুখ্য দুখীরাম সরেনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ ওই আদিবাসী পরিবারের। আর মুখ্য দুখীরাম সরেনের দাবি, গ্রামের সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেখব বিষয়টি সমাধান করা যায় কিনা। তবে আগে ওই মহিলাকেই সমস্যা সমাধানের জন্য মিটিং ডাকতে হবে বা গ্রামে আবেদন করলে তবেই সালিশি সভায় বসা হবে!এই বিষয়ে আদিবাসী সংগঠন তথা ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের নেতা দেবেন্দ্র মুর্মু বলেন, দ্রুত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। কিছু মানুষের মধ্যে এখনও কুসংস্কার থেকে গিয়েছে। অপরদিকে চন্দ্রকোনা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অলোক ঘোষ জানান, এখনও এসব নিয়ে কুসংস্কার রয়ে গিয়েছে কিছু জায়গায়। এনিয়ে আগেও প্রশাসনের তরফে সচেতনতামুলক প্রচার করা হয়েছে। গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হবে। আবারও এনিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। বলাই বাহুল্য যে আরও একটি নতুন বছর শুরু হয়েছে, কিন্তু ডাইনি অপবাদ দিয়ে নির্যাতনের ঘটনার অবসান কবে হবে, তার উত্তর এখনও অজানা।