• শিক্ষক বুদ্ধদেবের স্কুলের হীরকজয়ন্তী, স্কুলছুটদের ফেরাতেন দায়িত্ব নিয়ে
    আজ তক | ০২ জানুয়ারি ২০২৪
  • টিফিনের পরের ক্লাস, ফিফথ্ পিরিয়ড। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবী পরা এক যুবক ঢুকছেন ক্লাসে। বাংলা পড়াবেন। নাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পরে তিনিই হবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেটা প্রাক ৭০-এর দশকের ঘটনা। অসাধারণ বাংলা পড়াতেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। অনেকে স্কুল পালিয়ে গেলেও ওই পিরিয়েডের আগেই গুটিগুটি পায়ে পড়ুয়ারা হাজির হত ক্লাসে। শিক্ষকের পড়ানোর অমোঘ টান উপেক্ষা করা যে সহজ না। এমনই জানাচ্ছেন প্রাক্তনীদের একাংশ। স্কুলে কোনওদিন রাজনীতি নিয়ে একটা কথাও বলতে শোনেননি কেউ। দমদমের ওই এলাকা পরিচিত উদ্বাস্তু কলোনি হিসেবে।

    ছাত্ররা দু'একদিন স্কুলে গরহাজির হলেই অন্য ছাত্রদের দিয়ে খোঁজখবর নিতেন। এমনই সব গল্প উঠে আসছে তাঁকে ঘিরে। তিনি দমদমের শেঠ বাগান আদর্শ বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতা করেছেন। সেই স্কুলের ৭৫ বছর পূর্তি। কাল, মঙ্গলবার ২ জানুয়ারি স্কুলের হীরকজয়ন্তীর অনুষ্ঠান। বর্তমান পড়ুয়ারা উৎসাহে ফুটছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছাত্ররা কম-বেশি সকলেই প্রবীণ।তাঁদের স্মৃতিচারণায় উঠে আসছে আদর্শে মোড়া আড়ম্বরহীন বাংলার মাস্টারমশাই। এক অন্য বুদ্ধদেবের গল্প। 

    ওই স্কুলের প্রাক্তন পড়ুয়া ও লেখক হরিপদ ভৌমিক প্রিয় বাংলার মাস্টারমশাইকে নিয়ে বললেন, 'স্যারকে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবী ছাড়া আর অন্য কোনও পোশাকে দেখিনি। ছাত্রদের সবাইকে নামে চিনতেন। অসাধারণ পড়াতেন। দুটো একদম আলাদা মানুষ। স্কুলে কোনওদিন রাজনৈতিক কথা বলতে শুনিনি। ওঁর ক্লাস কেউ পারতপক্ষে মিস করতাম না। তবে একবার স্কুলের সামনে খুব বোমাবাজি হল। তখন নকশালপন্থী আন্দোলনের সময়। আমি ভয়ে স্কুল ছেড়ে দিলাম। ব্যারাকপুরে ব্যবসা শুরু করলাম। স্যর জানতে পেরে গেলেন। অন্য এক ছাত্রকে আমায় ধরে আনার কাজ দিলেন।তারপর আমাকে অনেক বোঝালেন।'
     
    আরও দু'একজন পড়ুয়ার কথায়, একজন শিক্ষক মূল্যবোধ জন্ম দেন। সেই মূল্যবোধগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন তেমনই একজন শিক্ষক। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছাত্র হরিপদ ভৌমিকের কথায়, 'স্যর সেদিন  বুঝিয়ে ফর্ম ফিল আপ না করালে আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাই দেওয়া হত না। তারপর যখন আমার প্রথম বই প্রকাশিত হল, গেলাম আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে স্যারকে বই দিতে। স্যর তখন শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছেন। স্যরকে বইটা হাতে দিয়ে প্রণাম করলাম। দেখি পিছন থেকে জ্যোতি বসু আসছেন। স্যর জ্যোতি বসুকে বললেন, আমার ছাত্র। জ্যোতি বসু স্যরকে প্রাক্তন ছাত্রের প্রণাম নিতে দেখে হেসেছিলেন।' 

    তখনও বিয়ে হয়নি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। ওই স্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসেবে পড়িয়েছিলেন প্রায় ৪ বছর। এ কথা জানালেন তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। ফোনে তিনি বললেন, 'তখনও আমাদের বিয়ে হয়নি। তাই শিক্ষক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিষয়ে আমার তেমন জানা নেই।' বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখন কেমন আছেন? উত্তরে বললেন, 'মিলিয়ে-মিশিয়ে রয়েছেন। খুব ভালোও বলা যায় না, আবার খারাপও না। তবে ঋতু পরিবর্তনের সময় একটু সমস্যা হয়। বই পড়তে বা লিখতে পারেন না বলে খুব কষ্ট পান। কিন্তু ওঁর মাথাটা একইরকম, আগের মতোই পরিষ্কার।'

    তিনি আরও বললেন, 'সন্ধেয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন। কোনওদিন ঘুমোনোর আগে পর্যন্ত গান চলে।' মীরা ভট্টাচার্য শেঠবাগান বিদ্যমন্দিরের সব প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়াকে হীরকজয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

     
  • Link to this news (আজ তক)