• সম্মানের সঙ্গে মৃত্যুর অধিকারের অঙ্গীকার
    আজকাল | ০৩ জানুয়ারি ২০২৪
  • সাগরিকা রায়চৌধুরি: অন্তিম সময়ে সম্মানের সঙ্গে যাতে মৃত্যু হয়, শরীরকে যন্ত্রের কষ্ট পেতে যাতে না হয়, তার জন্য আগাম ইচ্ছাপত্রের অঙ্গীকার করা যাবে। সুপ্রিম কোর্টের আইন মেনে সমাজের বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং আইনজীবীদের মতামত নিয়ে সেই ইচ্ছাপত্র এবং নিজ নির্দেশপত্রের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ‘‌দ্যুলোক পাড়ি’‌ সংস্থার উদ্যোগে করা হল মঙ্গলবার। দেশের আইনানুগ বিধি অনুযায়ী, এক ভবিষ্যৎ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সম্ভাবনার ইচ্ছাপত্র এবং নির্দেশ সংগঠন তৈরি করেছে, যার নাম অ্যাডভান্স মেডিক্যাল ডাইরেক্টিভ। এটি কী, কীভাবে অঙ্গীকার করা যাবে, অঙ্গীকার করার পর তা কোন সময়ে, কোন পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে, কারা, কীভাবে কার্যকরী করবেন ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে এদিন বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে একটি সচেতনতামূলক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এদিন তিনজন সেই ইচ্ছাপত্রের অঙ্গীকার করেন। তাঁরা হলেন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং দ্যুলোক পাড়ি–র সম্পাদক কল্লোল বসু, বিশিষ্ট চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরি এবং ড.‌পার্থসারথি মুখার্জি। মাস ছয়েক আগে থেকেই দ্যুলোক পাড়ি তাদের ভাবনাচিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করে। নিজের ভাবনা, ইচ্ছা এবং জীবনবোধই এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পথে একমাত্র নির্ণায়ক হোক— এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্থার পথচলা। ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরি বলেন, ‘‌মৃত্যু নিয়ে কেন এত কথা বলা, তার কারণ হল ভারত যখন স্বাধীন হয়েছিল তখন মানুষের জীবন যাপনের আশানুরূপ বয়স ছিল ৫০–‌এর আশপাশে। ২০২৩ সালে তা ৭০–‌এর থেকে বেশি দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানেরও অগ্রগতি হয়েছে। পৃথিবীতে আসাটা যতটা সুন্দর করে নিয়েছি, ততটা চলে যাওয়ার পথটা ক্রমাগত বন্ধুর করে তুলেছি। এখন চাইলেই চলে যাওয়া যায় না। একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তা প্রলম্বিত করি। বহু ক্ষেত্রে এরকমভাবে প্রলম্বিত করার চেষ্টা করা হয়, যাতে কয়েকদিন যেন আমার আত্মজন থাকে মানুষের কাছে সেই আশা তৈরি হয়। অসুস্থতা সারবে না, মৃত্যু অবধারিত জেনেও বহু ক্ষেত্রেই অধিকাংশ মানুষ চেষ্টা চালিয়ে যান। আত্মমর্যাদার সঙ্গে যেন জীবনটাকে কাটান মৃত্যুর সময়ে, সেই সুযোগ থাকে না। মৃত্যুর সময়ে যাতে সেই সম্মান থাকে। সেই সুযোগটাই আইন আমাদের সামনে করে দিয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টে যে আইন পাশ হয়, ২০২২ সালে তা আরও একটু পরিবর্তন করা হয়। আগের থেকে আমি আমার অন্তিমকালের চিকিৎসার ইচ্ছাপত্র দিয়ে যেতে পারি’‌। দ্যুলোক পাড়ির সভাপতি দেবশঙ্কর হালদার বলেন, ‘‌জীবনকে নিয়ে যেভাবে ভাবি, সেইরকম মৃত্যুকে নিয়েও ভাবা উচিত। দিনের পর দিন যন্ত্রণা সহ্য করে, হাসপাতাল বাড়ি করতে করতে ক্লান্ত। আগের থেকে জ্ঞানত একটা ইচ্ছাপত্র তৈরি করতে পারি বিজ্ঞানের হাত ধরে নিজের যন্ত্রণাকে রুখতে চাই। সেই সংস্থান রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে।’‌ কবি জয় গোস্বামী বলেন, ‘‌সম্মানের সঙ্গে মৃত্যুর অধিকার সকলের রয়েছে। এমন ব্যধি আছে, যার চিকিৎসা যন্ত্রণাদায়ক। এই যন্ত্রণাদায়ক চিকিৎসা সহ্য করতে হয়। কিন্তু আয়ু পান না। কেউ যদি মনে করেন আমি যন্ত্রণা চাই না। যে ক’‌দিন বাঁচব এইভাবে থাকব। সেই ইচ্ছাকে সম্মান দেওয়া উচিত।’ সম্পাদক কল্লোল বসু বলেন, ‘‌অ্যাডভান্স মেডিক্যাল ডাইরেক্টিভ আসলে একটি অঙ্গীকারপত্র। চিকিৎসা চালানো নিয়ে এক ধরনের উইল বলা চলে। মৃত্যুপথযাত্রীর সময়ে চিকিৎসা কেমন হবে সে সম্পর্কে আগে থেকেই উইল করে যেতে পারবে ব্যক্তি। কোন ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে, তার অনেক নিয়ম রয়েছে।‌ সেই বিষয়ে সচেতন করা হবে।’
  • Link to this news (আজকাল)