• ২২ ধরে শিকলবন্দি পশুর জীবন ছেলের! পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতার আশ্বাস প্রশাসনের...
    ২৪ ঘন্টা | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪
  • চম্পক দত্ত: জি ২৪ ঘণ্টার খবরের জের। দাসপুরে শিকলবন্দি ছেলের কাছে পৌঁছল প্রশাসন। খুশির কান্না দাসপুরের সেই মা'য়র! ছেলে কি তবে এবার মুক্তি পাবে? প্রশাসনের তরফে দেওয়া হল সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস।মায়ের বুকের পাথর খানিক হালকা হল। জি ২৪ ঘণ্টার খবরের জের। ২২ বছর ধরে শিকলবন্দি যুবকের জীবন এবার হয়তো খানিক বদলাবে। পরিবার চাইলে হোমে রেখে উপযুক্ত চিকিৎসা করা হবে ছেলের, অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সে প্রস্তাব দেওয়া হল বাবা-মাকে। আপাতত রেশন, পোশাক, শীতবস্ত্র কম্বল তুলে দেওয়া হল প্রশাসনের তরফে।দাসপুর-১ বিডিও দীপঙ্কর বিশ্বাসের নির্দেশে যুগ্ম বিডিও শিশির মাহালী, রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব মহাদেব প্রধান, উপপ্রধান চিন্ময় চক্রবর্তী সহ ব্লকের খাদ্য দফতর ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা যান দাসপুরের সুরতপুর গ্রামে শিকলবন্দি যুবকের বাড়িতে। তাঁর পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখা থেকে মা ও দাদার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন চিকিৎসা সহ আরও বিভিন্ন সরকারি সহায়তা প্রসঙ্গে। বিস্তারিত আলোচনা করেন। পরিবার চাইলে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা বা সরকারি হোমে রেখে সমস্ত রকম দেখভালের বিষয়েও কথা বলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশে পেয়ে যেমন চোখে জল শিকলবন্দি যুবকের মায়ের, তেমনই খানিক আশ্বস্ত হলেন যে এবার হয়তো ছেলের পরিস্থিতির কিছু একটা সুরাহা হবে।

    পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর-১ নম্বর ব্লকের রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সুরতপুর গ্রামের অত্যন্ত নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান ৪১ বছরের ওই যুবক। পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। তামার কাজ করতে করতে বাবার সঙ্গে চাষের কাজেও হাত লাগাতেন তিনি। স্বাভাবিক জীবন চলতে চলতেই ১৭ বছর বয়স থেকে সমস্যার শুরু। প্রথমদিকে চিকিৎসা করান বাবা-মা। খানিক ভালো হন। তারপর আবার সমস্যার শুরু। এমন অবস্থা থেকে যদি মুক্তি পাওয়া যায়, তাই ২২ বছর বয়েসে বিয়েও দিয়ে দেওয়া হয়। বছরখানেক পরে সন্তান গর্ভে নিয়েই বউ বাপের বাড়ি ফিরে যায়। স্ত্রী আর ফেরেনি। একমাত্র সন্তানটিও রোগে ভুগে মারা যায়। ততদিনে সমস্যা অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে।স্ত্রীকে কাছে না পেয়ে নিজের গায়ে নিজেই অ্যাসিড ঢেলে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেন ওই যুবক। মাকে বটির কোপ মারেন। ছাগল, গোরু পিটিয়ে মেরে ফেলেন। সবাই ভয় পেয়ে নিদান দেয় যে শিকলবন্দি করে রাখতে হবে ওই ছেলেকে। নাহলে গোরু ছাগলের মত মানুষকেও মেরে ফেলবেন! ভয়ে বাবা-মা ছেলেকে লোহার শিকলে বন্দি করেন। ২২ বছর ধরে সেই শিকল বাঁধা। খোলা হয়নি সেই শিকল। চিকিৎসাও হয়নি সেভাবে। বাবা, মা, দাদা কেউ-ই কাছে যেতে পারেন না। কাছে গেলেই ঢিল ছুঁড়ে মারেন। তাই লাঠির ডগায় ছেলেকে ভাত, মুড়ি, জল পৌঁছে দেন মা। শিকল বাঁধা অবস্থায় পশুর মত জীবন কাটান ছেলে! খাবার মেঝেতে ঢেলেই খান। আবার সেখানেই মল-মূত্র ত্যাগ করেন। অ্যাসিড দগ্ধ খালি গা। বেশিরভাগ সময় নগ্ন থাকেন। একটা চটের থলি সর্বক্ষণের সঙ্গী। শীত লাগলে নগ্ন শরীর ওই পুতিগন্ধময় থলির ভেতরেই ঢুকিয়ে বসে থাকেন।এদিকে বাবার বয়স ৭০ পেরিয়েছে। মায়ের বয়সও ৭০-এর কোটায়। নিজেদের বয়সের কারণেই তাঁরা ছেলের ভবিষ্যত্ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। সেই খবর তুলে ধরে জি ২৪ ঘণ্টা। খবর তুলে ধরতেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর। মিলবে চিকিৎসা, রেশন, ভাতা সবই। প্রশাসনের তরফে সবরকম সহযোগিতা ও পদক্ষেপ করা হবে বলে বাবা, মা ও দাদাকে আশ্বস্ত করেন আধিকারিকরা। এখন দেখার প্রশাসনের তৎপরতায় শিকলবন্দি যুবকের বন্দিদশা কবে ঘোচে।
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)