সন্দেশখালিকাণ্ডে সরব রাজ্যপাল, বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি বিরোধীদের...
২৪ ঘন্টা | ০৫ জানুয়ারি ২০২৪
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: 'গণতান্ত্রিক পরিবেশে বর্বরতা ও আক্রমণ আটকানোর দায়িত্ব সরকারের'। সন্দেহখালিকাণ্ডে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর কড়া বার্তা, 'সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, সংবিধান নিজের পথে চলবে'।
ঘটনাটি ঠিক কী? এ রাজ্যে রেশন দুর্নীতির শিকড়ের খোঁজে ইডি। দু'টি দল ভাগ হয়ে উত্তর ২৪ পরগনার অভিযান চালান তদন্তকারীরা। কবে? আজ, শুক্রবার সকালে।ইডির একটি দল পৌঁছয় বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের শ্বশুরবাড়িতে। অন্য দল তখন সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় তৃণমূল নেতা শাহাজাহান শেখের বাড়িতে। কিন্তু বাড়ি তালাবন্ধ। শেষে অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরেও যখন কারও সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না, তখন দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। এরপরই আচমকাই শুরু হয় বিক্ষোভ। ইডি আধিকারিকদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করেন বিক্ষোভকারীরা। ভেঙে দেওয়া গাড়ির কাচ।অডিও বার্তায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, 'সন্দেশখালির ঘটনা উদ্বেগজনক। গণতান্ত্রিক পরিবেশে বর্বরতা ও আক্রমণ আটকানোর দায়িত্ব সরকারের। সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, সংবিধান নিজের পথে চলবে'। রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন তিনি। রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি-কে।এদিকে সন্দেশখালিকাণ্ডে যখন NIA তদন্তের দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তখন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্ফোরক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর মতে, 'বিচারপতিদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, বিচারপতি বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কটু মন্তব্য করা হচ্ছে। বিচারপতিদের ভয় দেখানো হচ্ছে, পোস্টার পড়ছে। ইডির হামলা হচ্ছে, আগামিদিনে বিচারপতিদের উপর না হামলা হয়। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার মতো উপযুক্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হয়েছে বাংলায়'।সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'আমি বলতে দ্বিধা করি না যে, এগুলো মমতা অনুপ্রাণিত করেছে। মমতা একটা জনসভায় বলেছিলেন তাঁর কর্মীদের, সিবিআই যদি আমার বাড়িতে আসে, আপনারা পাশে দাঁড়াবে তো! অর্থাৎ সিবিআই বা ইডি তদন্ত করতে এলে, তাঁদের শারীরিকভাবে আটকে দেওয়া, দলগতভাবে আটকে দেওয়া ঘটনাটি তৃণমূলের পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। আমার ধারণা, সমস্ত অপকর্ম থেকে বাঁচবার চেষ্টায়, মমতা এরকম একচি আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হয়তো তিনি চাইছেন, রাষ্ট্রপতি শাসন হয়ে যাক'।আর তৃণমূল? দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা কটাক্ষ, 'কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় দালাল অধীর চৌধুরী যেখানে বসে রয়েছে, সেখানে অধীর চৌধুরীর মুখ দিয়ে কেন্দ্রের কথা, এজেন্সির সমর্থনে কথা, বিজেপির কথা বেরোবে, এ তো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এই ইডি, এই সিবিআই যখন দিল্লিতে কংগ্রেস নেতাদের বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করে, তখন এই অধীর চৌধুরীই বড় বড় কথা বলেন, রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। ইডি-র বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাষা প্রয়োগ করেন। আর সেটা যদি তৃণমূলের বিরুদ্ধে হয়, তখন নাচতে শুরু করেছেন'।'কেন্দ্রীয় এজেন্সি কেন রাজ্য প্রশাসনকে জানিয়ে একাজ করেনি'? প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের আইটি সেলের ইনচার্ড দেবাংশু ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, 'সন্দেশখালির ঘটনার জন্য় সম্পূর্ণ যদি কেউ দায়ী হয়ে থাকে, তাহলে সেটা কেন্দ্রীয় এজেন্সি স্বয়ং! রাজ্যপাল থেকে শুরু মাননীয় বিচারপতিরা যাঁরা এই ঘটনা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করছেন, তাঁরা প্রেক্ষিত জানেন না। তাঁদের জেনে রাখা দরকার, কেন্দ্রীয় এজেন্সি এই ধরণের তল্লাশির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেননি, রাজ্য সরকারকে জানান না, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জানান না। পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রান্ত কতটা স্পর্শকাতর যেটা রাজ্য প্রশাসন, পুলিসের জানার কথা। কেন্দ্রীয় এজেন্সির জানার কথা নয়'।দেবাংশুর আরও বক্তব্য, 'তারা যদি রাজ্য পুলিসের সঙ্গে আলোচনা না করে...হ্যাঁ এটা মানি আমরা যে, একটি গোপনীয়তার প্রয়োজন আছে, তাঁরা অন্তত রাজ্যের মুখ্যসচিবকে জানাতে পারতেন। সেক্ষেত্রে রাজ্য় পুলিসের সম্পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে একটা মসূর্ণ তল্লাশি হতে পারে'। সঙ্গে প্রশ্ন, 'পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি তল্লাশি হয়েছে, তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। বালু মল্লিকের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে, তিনি গ্রেফতার হয়েছে। ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে, মদন মিত্রের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে। একের পর এক নেতা.. শান্তনু, কুন্তল থেকে শুরু করে জীবনকৃষ্ণ থেকে মানিক ভট্টাচার্য, প্রত্য়েকের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। কার ক্ষেত্রে এরকম কোনও ঘটনা ঘটেছে'?