কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: শংকর নয়। ডাকু। এই নামেই চেনে এলাকা। গোটা জেলা। এমনকি দলের শীর্ষ নেতৃত্বও। ডাকু কী অর্থে? এলাকায় পৌঁছলেই তা বোঝা যায়। কীভাবে উত্থান বনগাঁর “ডন” শংকর ওরফে ডাকু আঢ্যর? জ্যোতিপ্রিয়র হাত ধরেই একসময় রাজনীতির ময়দানে আসেন শংকর। ২০০৫ সালে প্রথমবার বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলর হন। পরে চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন তিনি। বালুর ছত্রছায়াতেই উল্কার গতিতে বনগাঁ শহরে উত্থান ঘটে শংকরের। জ্যোতিপ্রিয়র চিঠিতে শংকরের নাম! বনগাঁ জুড়ে শংকরের দাপট ছিল প্রশ্নাতীত। শংকরের একাধিক ব্যবসাও রয়েছে। কলকাতা, বনগাঁ ও পেট্রাপোল সীমান্তে তাঁর বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের অফিস রয়েছে। সেই সংস্থার মাধ্যমেই বালুর টাকা ডলারে কনভার্ট করে বিদেশে পাচার করা হয় বলে দাবি ইডির। বিরোধীদের অভিযোগ, একসময় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ধুর সিন্ডিকেট চালাতেন শংকর। বনগাঁ এবং বাগদায় তাঁর সোনার দোকানও রয়েছে। বনগাঁ শহরে রয়েছে হোটেলও। এর বাইরেও বনগাঁয় শংকর আঢ্যর বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। পাশাপাশি একাধিক খুনের ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল দাপুটে নেতার। বনগাঁর বেতাজ বাদশা সেই শংকর আঢ্যর বাড়িতেই গতকাল সকালে হানা দেয় ইডি। শেষে গভীর রাতে শংকর আঢ্যকে গ্রেফতার করে ইডি। এই শংকর আঢ্যর দিঘায় থ্রি স্টার হোটেল রয়েছে ৷ বনগাঁর খেদাপাড়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকা দিয়ে শংকর আঢ্য বাবা হারাধন আঢ্যের নামে হারাধন আঢ্য মেমরিয়াল ইংলিস মিডিয়াম স্কুলও গড়েছে ৷ বনগাঁর বাজার এলাকায় রয়েছে হারাধন আঢ্যর নামে মার্কেট ৷ বনগাঁ থানার সামনে রয়েছে পুল সাইড ইন হোটেল কাম রেস্টুরেন্ট যা পুরসভার ও পূর্ত দফতরের জায়গায় বলে অভিযোগ। শিমুলতলা ও মতিগঞ্জে রয়েছে তিনটি বাড়ি। এছাড়া কলকাতায় ফ্ল্যাট রয়েছে। আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে বিদেশের মাটি দুবাইতেও।বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের একাধিক সংগঠনেরও মাথায় ছিলেন শংকর। তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যও বনগাঁ পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন। বর্তমানে তিনি পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বনগাঁ থেকেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন শংকর। কিন্তু দল তাঁকে প্রার্থী না করায়, ভোটের প্রচার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন শংকর। যে কারণে রাজ্যজুড়ে প্রবল তৃণমূল হাওয়াতেও গোষ্ঠীকোন্দলে দীর্ণ বনগাঁয় সবকটি আসনে হারতে হয় দলকে। এরপরই দলের ভিতরে ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়েন শংকর। দলের সব পদ থেকেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।