মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য: সন্তানহন্তা সূচনার শিকড় কলকাতাতেই। কলকাতার মেয়ে সূচনা শেঠ। আড়িয়াদহে বাড়ি।বাবা, মায়ের একমাত্র সন্তান সূচনা। কলকাতাতেই জন্ম। তারপর যদিও বাইরে চলে যান সূচনারা। বড় হয়ে ওঠা চেন্নাইতে। তারপর কলেজের সময় আবার কলকাতায় ফেরেন সূচনা। কলকাতার ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি থেকে ফিজিক্সে অনার্স করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স। পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সংস্কৃতে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা। এরপর কর্মজীবনেও কৃতিত্বের ছাপ রাখেন মেধাবী সূচনা। সেই সূচনা নিজের ৪ বছরের ছেলেকে নৃশংসভাবে খুন করেছেন! একথা মানা তো দূরের কথা, বিশ্বাস-ই করতে পারছেন না সূচনার আত্মীয়স্বজনদের কেউ। তাঁরা বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত। মা মারা গিয়েছে ২০২১ সালে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। বাবা জানালেন, বাইরে আছেন, সন্ধ্যায় কথা বলবেন। ওদিকে সূচনার মামী বলেন, 'একমাত্র নাতি চলে গেছে। জামাইয়ের বিপর্যস্ত অবস্থা।' গোটা ঘটনা অত্যন্ত শকিং! এমনটাই বলছেন সবাই। বাড়ির খানিক দূরেই মামাবাড়ি। মামী-ই কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন সূচনা। এই ঘটনায় বিপর্যস্ত সূচনার মামার বাড়িও। তারা কোনও কথা-ই বলতে চাইছেন না। ওদিকে সূচনার মাসি জানান, ২০২১ সালে শেষ সূচনার সঙ্গে দেখা হয়। মা মারা যাওয়ার সময় স্বামী-সন্তানকে নিয়েই কলকাতায় এসেছিলেন সূচনা। তিনি বলেন, '২০২১-এ দিদি মারা যাওয়ার সময় ও আসে। স্বামী-সন্তানের সঙ্গেই আসে। নিয়ম মেনে সব কাজও করে।' মাসি আরও বলেন, সেইসময় সূচনার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকত্ব কেউ দেখেননি। তখন সবই স্বাভাবিক ছিল। এক্সট্রোভার্ট না হলেও সবার সঙ্গে মিশত সূচনা। কথা বলত।কিন্তু সেই সূচনা, ঘরের মেয়ে সূচনা, কী করে এহেন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারল, ভেবেই কূল পাচ্ছেন না তাঁরা। গোয়ার হোটেলের রুমে ৪ বছরের ছেলেকে খুন করেন সূচনা। খুনের পর দেহ ব্যাগে ভরে বেঙ্গালুরুতে পালাচ্ছিলেন সূচনা শেঠ। সেইসময় চিত্রদুর্গা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে কর্ণাটক পুলিস। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস মনে করছে, ৩৬ ঘণ্টা আগেই ৪ বছরের একরত্তি ছেলেকে খুন করেন সূচনা শেঠ। বালিশ বা তারজাতীয় কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করে ছেলেকে খুন করেন তিনি। এমনকি তারপর নিজেও আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সূচনা।মাইন্ডফুল AI ল্যাব-এর সিইও ছিলেন সূচনা শেঠ। তাঁর লিংকডিন পেজের প্রোফাইল অনুযায়ী সূচনা শেঠ ২০২১-এ এআই এথিক্সে সেরা ১০০-য় ছিলেন। দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি ডেটা সায়েন্স নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সূচনা কাজ করেছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টারেও। স্বামী ভেঙ্কট রামনও পেশায় একজন এআই ডেভেলপার। ২০১০ সালে ভেঙ্কট রামনের সঙ্গে বিয়ে হয় সূচনা শেঠের। তাঁদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা-ই এই নৃশংস হত্য়াকাণ্ডের নেপথ্য কারণ বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিস।