• Ram Mandir in Bengal: প্রায় ২৬০ বছরের পুরনো রামমন্দির রয়েছে এই বাংলাতেই! জেনে নিন ইতিহাস...
    ২৪ ঘন্টা | ১২ জানুয়ারি ২০২৪
  • অনুপকুমার দাস: আগামী ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হবে অযোধ্যার রামমন্দিরের। সারা দেশে এ নিয়ে উন্মাদনা আয়োজনের শেষ নেই। কিন্তু এই আবহে ক'জন মনে রেখেছেন, এই বাংলায় ২৫৬ বছর আগের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এক রামমন্দির! ব্রিটিশ শাসনকালেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এই রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। গুটিকয় ভক্তেরা এই রামের সেবায় জড়িত। রামমন্দিরে রয়েছে কষ্টিপাথরের রাম এবং সীতা।

    পূজারি-সহ সাধারণ মানুষের দাবি, এই মন্দিরের দিকে নজর দিলে এই মন্দিরের আরও উন্নতি হবে। নদিয়া জেলার  মাঝদিয়া থেকে ৩ কিমি দূরে শিবনিবাস গ্রাম। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র বাংলায় বর্গী আক্রমণের সময়ে তাঁর রাজধানী নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগর থেকে সরিয়ে শিবনিবাসে চালু করেছিলেন।রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জায়গাটার নামকরণ শিবের নামে করেছিলেন। এখানে তিনি একটি সুন্দর রাজপ্রাসাদ ও কয়েকটি  মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর মধ্যে এখন  মাত্র  তিনটি মন্দির অবশিষ্ট আছে-- দুটি শিবমন্দির একটি রামমন্দির। প্রতিটি মন্দিরের উচ্চতা ৬০ফুট।শিবনিবাসে রাজার রাজধানী প্রতিষ্ঠার একটি কাহিনি আছে। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নসরত খাঁ নামক এক দুর্ধর্ষ  ডাকাতকে  দমন করতে মাঝদিয়ার কাছে এক গভীর অরণ্যে উপস্থিত হয়ে ডাকাত দমন করে সেখানে একরাত অবস্থান করেন। পরদিন সকালবেলায় তিনি যখন নদীতীরে মুখ ধুচ্ছিলেন, তখন একটি রুইমাছ জল থেকে লাফিয়ে মহারাজের  সামনে এসে পড়ে। আনুলিয়ানিবাসী কৃষ্ণরাম নামক মহারাজের এক আত্মীয় তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ঘটনাটি দেখে মহারাজকে বলেন, এইস্থান অতি রমণীয়, উপরন্তু  রাজভোগ্য সামগ্রী  নিজে থেকেই মহারাজের সামনে এসে হাজির হয়। তাই এই স্থানে  মহারাজ বাস করলে মহারাজের নিশ্চয়ই ভাল হবে। কৃষ্ণচন্দ্রও তখন বর্গীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে এরকমই এক  নিরাপদ জায়গা খুঁজছিলেন। স্থানটি মনোনীত হলে রাজা নদীবেষ্টিত করে স্থানটি সুরক্ষিত করেন। শিবনিবাসেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র মহাসমারোহে অগ্নিহোত্র বাজপেয় যজ্ঞ সম্পন্ন করেন। এই  উপলক্ষ্যে কাশী, কাঞ্চী প্রভৃতি স্থান  থেকে  সমাগত  পণ্ডিতমণ্ডলী তাঁকে 'অগ্নিহোত্রী  বাজপেয়ী' আখ্যা দেন। শিবনিবাসের প্রতিষ্ঠাকাল ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দ। সেই সময়ে  শিবনিবাস কাশীতুল্য  বলে পরিগণিত হত। রাজা একটি ৯ ফুট কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত করে নিত্যপূজো শুরু করেন সেখানে। পাশেই আরও একটি শিবমন্দির 'রাজ্ঞীশ্বর' প্রতিষ্ঠা করেন।পরে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন রামমন্দিরও। এর প্রতিষ্ঠাকাল ১৬৮৪  শকাব্দ  অর্থাৎ  ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দ। মন্দিরে একটি  প্রতিষ্ঠাফলক আছে। প্রতিষ্ঠাফলকে উৎকীর্ণ লিপি থেকে  জানা যায়, মন্দিরটি মহারাজা তাঁর দ্বিতীয়া মহিষীর জন্য নির্মাণ করেছিলেন। প্রথমটি  প্রথমা মহিষীর জন্য। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ প্রথম মন্দিরের চেয়ে  কিছুটা ছোট-- উচ্চতা সাড়ে সাত ফুটের। পাশেই রামসীতার মন্দির। রামমন্দিরটি উঁচু ভিত্তিবেদির উপর স্থাপিত। আংশিক দালান আকারের কোঠার উপর একটি শিখর স্থাপিত যা অনেকটা  বর্গক্ষেত্রাকার। দালানের  প্রতিটি ছাদ সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম আকৃতির এবং গর্ভগৃহের প্রতিটি ছাদ ত্রিভুজাকার না হয়ে অনেকটা ঘণ্টার লম্বচ্ছেদের মতো বিরল আকৃতির। দালান ও শিখরের খিলানগুলি গথিকরীতি অনুযায়ী নির্মিত। বলা বাহুল্য, শিবনিবাসের এই মন্দিরগুলিতে 'টেরাকোটা'র  কাজ  নেই। ১৮২৪  খ্রিস্টাব্দে  বিশপ হেয়ার  সাহেব  নৌকা  করে  ঢাকা যাওয়ার পথে এখানে নেমে মন্দিরগুলি দেখেন এবং  মুগ্ধ হন। মন্দিরগুলির  বিবরণ  ১৮২৮  খ্রিস্টাব্দে  লন্ডন থেকে প্রকাশিত জার্নালে প্রকাশও করেন তিনি।
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)