• মুসলিম-খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের আমন্ত্রণ নিয়ে ধোঁয়াশাই
    আনন্দবাজার | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪
  • আমন্ত্রণ গিয়েছে ১৫০টির বেশি বিভিন্ন মত-পন্থ সাধু সমাজের কাছে। আমন্ত্রণ পেয়েছেন নেপালের সন্ন্যাসী সমাজ। আমন্ত্রণ গিয়েছে জৈন, বুদ্ধ, শিখ সমাজের ধর্মীয় নেতাদের কাছে। কিন্তু দেশের সংখ্যালঘু সমাজের দুই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ মুসলিম বা খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা রামমন্দিরের উদ্বোধনে থাকছেন কি না, সেই ধোঁয়াশা রয়েই যাচ্ছে।

    সব মিলিয়ে ২২ জানুয়ারি মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন প্রায় চার হাজার লোক আমন্ত্রিত হতে চলেছেন। আরএসএস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধর্মীয় ওই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মত ও পরম্পরার প্রায় দেড়শো জন প্রতিনিধির কাছে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। আমন্ত্রণ গিয়েছে জৈন, বৌদ্ধ, শিখ সমাজের কাছে। আরএসএস সূত্রের মতে, যেহেতু এঁরা ভারতীয় মত ও পন্থের প্রতিনিধি, সেই কারণে এঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজনীতিকদের মতে, আরএসএস নীতিগত ভাবে বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন সমাজকে অভিন্ন ভারতীয় সমাজের অঙ্গ হিসেবে গণ্য করে থাকে। কারণ এই ধর্মগুলির শিকড় এক। পরে এরা মূল শাখা থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।

    আরএসএস মনে করে, ভারতের সংখ্যালঘু সমাজের একটি বড় অংশ মুসলিম বা খ্রিস্টান ধর্মালম্বী হলেও ওই ধর্মগুলি এ দেশে এসেছে বহিরাগতদের সঙ্গে। বহিরাগতদের ধর্ম হিসেবে। তাই আমন্ত্রিতদের যে তালিকা রয়েছে, তাতে কোথাও মুসলিম বা খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের নাম উল্লেখ নেই বলেই জানা গিয়েছে। ফলে ওই ধর্মের কোনও ধর্মগুরু আসবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। কোনও মুসলিম ধর্মগুরুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অলোক কুমার সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘‘রাম মন্দিরের যে মূল মামলাকারী, সেই ইকবাল আনসারিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’ একটি সূত্রের মতে, যদি মুসলিম বা খ্রিস্টান সমাজ থেকে ক্রীড়া, সাহিত্য, উদ্যোগপতি, অভিনেতা, পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্ত, সেনা সম্মানপ্রাপক হন তা হলে ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তিনি আমন্ত্রণ পাবেন। পাশাপাশি বৃহত্তর হিন্দু সমাজের অঙ্গ হিসাবে দেশের দলিত, তফশিলি জাতি, আদিবাসী ও যাযাবর সমাজের নেতাদের আমন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ নীতিগত ভাবে এদের হিন্দু সমাজের অঙ্গ হিসেবেই দেখে গেরুয়া শিবির।

    এ ছাড়া আমন্ত্রিতদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অযোধ্যায় করসেবার সময়ে মৃত করসেবকদের পরিবারদের আমন্ত্রণে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আন্দোলনে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেই সব করবসেবক ও পরিবারের সদস্যদের। এ ছাড়া যে সব আইনজীবীরা রামমন্দির নির্মাণের আইনি লড়াইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়েছিলেন আমন্ত্রিতের তালিকায় রয়েছেন তাঁরাও। আমন্ত্রণ গিয়েছে নোবেল, ভারতরত্ন, পরমবীর চক্র, পদ্মসম্মানের মতো পুরস্কার বিজেতাদের কাছে। বর্তমান তিন বাহিনীর প্রধান ছাড়াও প্রাক্তন সেনাপ্রধান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, কৃষক, শ্রমিক, বিভিন্ন ক্রীড়া ক্ষেত্রে নামকরা ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন উদ্যোক্তরা।

    রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সব দলের সভাপতিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে ‘ইন্ডিয়া’র অধিকাংশ দলই সম্ভবত ওই অনুষ্ঠান বয়কট করতে চলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একমাত্র আমন্ত্রণ পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। নীতিগত ভাবে আর কোনও মুখ্যমন্ত্রীকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে সূত্রের মতে, যোগী ছাড়াও আরও দু’জন মুখ্যমন্ত্রী এবং কিছু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে তাঁরা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে প্রবাসী ভারতীয় সমাজ রয়েছে, সেই সব দেশ থেকে ৫৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে আজ ধোঁয়াশা কাটল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আমন্ত্রণকে কেন্দ্র করে। গত কাল উপরাষ্ট্রপতি জগদীশ ধনখড়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার পরে আজ রাতে রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)