• কমছে সহযোদ্ধা, একা কুম্ভ রণজিতেই ভরসা কংগ্রেসের
    আনন্দবাজার | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪
  • গত পুরসভা নির্বাচনে কার্যত একা তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছিলেন। জিতিয়েছিলেন আরও তিন দলীয় প্রার্থীকে। দল তাঁকে কাটোয়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা করেছিল। এ বার সেই কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি রণজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দায়িত্ব বাড়াল দল। যদিও পুরভোটের সহযোদ্ধারা অন্য দিকে ভিড়েছেন বলে দাবি দলেরই একাংশের। ফলে কংগ্রেসের গড়ে এখন একা কুম্ভ রণজিৎই। দলীয় সূত্রে খবর, লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘সুপারিশে’ এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পদে নিযুক্ত করেছেন রণজিৎকে। গত ৭ জানুয়ারি এআইসিসি সেই নিয়োগপত্র প্রকাশ্যে এনেছে।রণজিৎ বলেন, “দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা আমার কাছে চ্যালেঞ্জের।’’

    বাম নাকি তৃণমূল, আগামী লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে কংগ্রেস কাদের সঙ্গে জোট বাঁধবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জোট হলেও বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি কংগ্রেসকে ছাড়া হবে কিনা, তা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, রণজিৎকে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের ভোটের দায়িত্ব দেওয়ায় এটা মনে করা যেতেই পারে, যার সঙ্গেই জোট হোক না কেন, কংগ্রেস ওই আসনটি জোটসঙ্গীর থেকে দাবি করবে। গত লোকসভা ভোটে ওই আসনে বামেদের প্রার্থী ছিল। লড়াই ছিল মূলত চতুর্মুখী। এ বারও যদি তা হয়, তবে রণজিতের কাজ অনেক বেশি কঠিন হবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল ব্যক্তিরা। এ নিয়ে রণজিতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এতকিছু ভাবছি না।’’

    বাম জমানায় কাটোয়া শহর ছিল কংগ্রেসের দুর্গ। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও কংগ্রেসের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল কাটোয়ায়। টানা ২০ বছর কাটোয়া পুরসভা দখলে রেখেছিল কংগ্রেস। ২০১১ বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দিতেই রাতারাতি বদলে যায় সব সমীকরণ। দলের নেতা-কর্মীদের প্রায় সকলেই তৃণমূলে যোগ দেন। সেই পরিস্থিতিতেও জমি আঁকড়ে পড়েছিলেন রণজিৎ। হাতে গোনা কয়েক জনকে নিয়ে গত পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দেন তিনি। দলের প্রার্থী জোগাড় করা থেকে শুরু করে প্রচার ও ভোটের দিন বুথ আগলে পড়ে থাকা— সবেরই নেতৃত্বে ছিলেন। তার ফলও পান তিনি। চারটি আসনে জেতে কংগ্রেস। কিন্তু দলে ভাঙন ঠেকাতে পারেননি তিনি। জয়ী তিন কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি পরে তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। সেই থেকে একা রণজিৎ কাটোয়ায় কংগ্রেসের আশার দীপ।

    গত লোকসভা ভোটে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছিল। লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা মন্তেশ্বর, ভাতার, বর্ধমান দক্ষিণ, গলসি-সহ সাটটি বিধানসভায় বহু বুথে দলের এজেন্টও দিতে পারেনি কংগ্রেস। ওই কেন্দ্রে বিজেপি জয়ী হওয়ার পরে কাটোয়ায় গেরুয়া শিবিরের শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে হাতে গোনা কয়েক জন কর্মীকে নিয়ে বুথ থেকে শুরু করে ব্লক স্তর সংগঠন সাজানো রণজিতের কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’ বলে জানাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা।

    কী ভাবে করবেন সেই কাজ? রণজিৎ বলেন, ‘‘এক দিকে তৃণমূলের লাগাম ছাড়া দুর্নীতি, অন্য দিকে বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের উস্কানি। এই রাজনৈতিক আবহে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে তাঁদের নিয়েই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাব। বুধবার মন্তেশ্বরে প্রথম বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের কাটোয়ার এক নেতা বলেন, “যিনি দলের পুরপ্রতিনিধিদের ধরে রাখতে পারেন না, তিনি আবার লোকসভায় দলের দায়িত্ব পেয়েছেন! বিষয়টি আমাদের কাছে হাস্যকর।” এই কটাক্ষকে পাত্তা দিতে চাননি রণজিৎ।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)